ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এক মাসেও সন্ধান মেলেনি ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুলের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২
এক মাসেও সন্ধান মেলেনি ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুলের নিখোঁজ ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম

ঢাকা: বাড়ির ভাড়া তুলতে গিয়ে রাজধানীর উত্তরখান এলাকা থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম নিখোঁজ হন। এরপর এক মাস পেরিয়ে গেলেও তার কোনো হদিস মেলেনি।

নজরুল ইসলাম অগ্রণী ব্যাংকের মতিঝিলের বি-ওয়াপদা শাখার সিনিয়র অফিসার। পুলিশের এক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) ছোট ভগ্নিপতি। উত্তরখানে নিজের বাড়ি থাকলেও তিনি শনিরআখড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। গত ৭ জানুয়ারি সকালে নিজের উত্তরখানের বাড়ির ভাড়া তুলতে বের হন তিনি। সেই থেকে তার কোনো সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি ভুক্তভোগীর স্ত্রী রুবিনা নজরুল রাজধানীর উত্তরখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি- নং-৪৬৮) করেন।

রুবিনা নজরুল বাংলানিউজকে জানান, গত ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার মধ্যে তিনি উত্তরখানের উদ্দেশ্যে শনিরআখড়ার বাসা থেকে বের হন। তার (নজরুল ইসলাম) ব্যবহৃত দুটি মোবাইলের একটি সঙ্গে নিয়ে যান। যত রাতই হোক তিনি বাসায় ফিরলেও ওইদিন রাত থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বার বার চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সকালে আত্মীয়-স্বজনদের বিষয়টি জানানো হয়। এরপর সবাই মিলে তার খোঁজ করেও কোনো হদিস পাইনি। ঘটনার দুই দিন পর উত্তরখান থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। কিন্তু নিখোঁজের পর একমাস পার হয়ে গেলেও নজরুল ইসলামের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও  জানান, নজরুল ইসলাম ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি উত্তরখান ও তুরাগে জমি কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন। তবে কারও সঙ্গে তার কোনো শত্রুতা ছিল না।  

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মতিঝিলের অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখার ভোল্টের (লকার) চাবি সব সময় নজরুল ইসলামের কাছেই থাকতো। অন্য কারও কাছে তিনি এই চাবি দিতেন না। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ওই চাবি তিনি এক সহকর্মীকে দিয়ে আসেন এবং বলেন ফিরতে দেরি হবে। এছাড়াও ব্যাংকে তার ৬৮ লাখ টাকার একটি ঋণ রয়েছে। নজরুল ইসলাম ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি রাজধানীর উত্তরখান ও তুরাগ এলাকায় জমির ব্যবসাও করতেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নজরুল ইসলাম কোনো কারণে আত্মগোপনে গেছেন কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে নিখোঁজের পর রাজধানীর উত্তরখান ও যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ, র‌্যাব, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-সহ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার বিভিন্ন ইউনিট তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়াও নজরুল ইসলাম দেশের বাইরে গেছেন কিনা, সে বিষয়ে তল্লাশি করতে ইমিগ্রেশন পুলিশকে একটি চিঠি দিয়েছে উত্তরখান থানা পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, ৯ জানুয়ারি উত্তরখান থানায় একটি নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডি নথিভুক্ত হয়। এরপর থেকে আমরা ওই ব্যক্তির সন্ধানে তদন্ত শুরু করি। ঘটনার পর অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখায় যেয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তারা জানান, নজরুল ইসলাম একজন হাস্যোজ্জ্বল মানুষ। ব্যাংকের লকারের চাবি তার কাছেই থাকতো। কাউকে তিনি চাবি দিতেন না। কিন্তু নিখোঁজের আগের দিন (৬ জানুয়ারি) চাবিটি ব্যাংকের এক সহকর্মীর কাছে দিয়ে যান।

ওসি আরও বলেন, আমরা শনিরআখড়া থেকে উত্তরখানের হেলাল মার্কেট পর্যন্ত এলাকার সব সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখেছি। কিন্তু কোথাও তার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলের কথোপকথন চেক করা হয়েছে। সেখানেও কিছু মেলেনি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ লোকেশন পাওয়া গেছে শনিরআখড়া এলাকায়।

ওসি মো. আব্দুল মজিদ বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ মুক্তিপণ দাবি করে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন করেনি। তবে সব বিষয়ে বিবেচনায় রেখেই আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনার তদন্ত করছি।

নজরুল ইসলাম ও রুবিনা দম্পতির দুই ছেলে। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ছোট ছেলে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী। শনিরআখড়ায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন । অগ্রণী ব্যাংকের মতিঝিল বি-ওয়াপদা শাখায় তিনি ১৩/১৪ বছর ধরে আছেন। গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এসজেএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।