কক্সবাজার: মাত্র ১০ দিন আগে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান মানু রাণী শীলের স্বামী সুরেশ চন্দ্র সুশীল। এখনও স্বামী হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠতে পারেননি তিনি।
কিন্তু এরমধ্যেই মঙ্গলবার ভোরে ঘটে গেল বড় একটি দুর্ঘটনা। এই একটি দুর্ঘটনাই কেড়ে নিয়েছে মানু রাণীর পাঁচ সন্তানের জীবন। স্বামীর পর এবার এক সঙ্গে পাঁচ সন্তানের মৃত্যুর শোক যেন চারটি খানি কথা নয়। তাই তো এই মায়ের আর্তনাদে আকাশ বাতাসও ভারি হয়ে ওঠছিল। একসঙ্গে পাঁচটি মরদেহের ভার যেন কিছুতেই নিতে পারছিলেন না মানু রাণী শীল।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট রিংভং এলাকার হাসিনা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র সুশীলের ঘরেই দেখা গেল সন্তানহারা এই মায়ের আর্তনাদ। যেখানে বাড়ির উঠানে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে পাঁচটি মরদেহ।
স্বামী হারানোর নয় দিনের মাথায় একসঙ্গে পাঁচ সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর মানু রাণী শীল। শোকে স্তব্ধ মানুবালা কান্না করতে করতে যেন তার চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে।
এ সময় পাগলপ্রায় মানু রানী শীল (৬৫) আর্তনাদ করতে করতে বলেন, স্বামীকে হারিয়েছি, আজ একসঙ্গে পাঁচ সন্তান চলে গেল। যাদের এত কষ্ট করে মানুষ করেছি, তাদের নিয়ে গেছে। আমি কাদের জন্য বাঁচব। এমন আর্তনাদ করেই বারবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের মালুমঘাট খ্রিষ্টান হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কক্সবাজারমুখি একটি মিনি ট্রাক তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মানু রাণী শীলের চার সন্তান,পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরেক সন্তানের মৃত্যু হয়। এরা হলেন অনুপম শীল (৪৮), নিরুপম শীল (৪৫), দীপক শীল (৪০), চম্পক শীল (৩৮) ও স্মরণ শীল (৪৬)।
উল্লেখ্য ১০ দিন আগে গত ২৮ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী সুরেশ চন্দ্র সুশীল। আজ বুধবার তার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। এরই অংশ হিসাবে মঙ্গলবার ক্ষৌরকর্ম পালন করার জন্যে তাঁরা নয় ভাই বোন ভোর বেলায় মহাসড়কের পূর্ব পাশের বনে গিয়েছিলেন। এ কাজ শেষে বাড়ি ফেরার জন্য মহাসড়কের পাশে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন এরপর ঘরে পৌঁছে অন্যান্য কর্ম সেরে তারা বাবার শ্মশানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে কক্সবাজারমুখী একটি পিকআপ মুল সড়ক থেকে নেমে গিয়ে তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই স্মরণ সুশীল ।
এ সময় অল্পের জন্য রক্ষা পান প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র সুশীলের ছেলে প্লাবন সুশীল (১৯) ও মেয়ে মুন্নী সুশীল (২৮)। প্লাবন এবার ডুলাহাজারা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বাবার শ্রাদ্ধের আগের দিন ৫ ভাইয়ের মৃত্যু, শোকে স্তব্ধ স্বজনরা
বাংলাদেশ সময়: ০১২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮,২০২২,
এসবি/এনএইচআর