ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সুবল নামের ছেলেটি হয়ে গেল মেয়ে, বাড়িতে মানুষের ঢল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
সুবল নামের ছেলেটি হয়ে গেল মেয়ে, বাড়িতে মানুষের ঢল

ঠাকুরগাঁও: ছেলে হয়ে জন্মালেও শৈশব থেকেই মেয়েদের চালচলন, পোশাক পরিচ্ছদের প্রতি সুবল শীলের ছিল প্রবল ঝোঁক।  

নিজেকে মেয়ে ভাবতেই ভালো লাগতো তার।

নিজের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে ছিল সংশয়, মনে হতো-তিনি ছেলে নাকি মেয়ে? কারণ মেয়ে সাজতে তার খুব ইচ্ছে হতো। বড় হয়ে নিজের সেই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়ে অপারেশনের মাধ্যমে নিজেকে পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তর করেন তিনি। সুবল শীল থেকে রূপান্তরিত হয়ে নিজের নাম রাখেন মেঘা শর্মা। এরপর রাজধানী ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় নিজ বাড়ি এলে তাকে এক নজর দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন।  

পীরগঞ্জ উপজেলার থুমনিয়া নাপিতাপাড়া গ্রামের এক নরসুন্দর পরিবারে ছেলে হয়ে জন্ম নেন মেঘা শর্মা। বাবা-মা নাম রাখেন সুবল শীল। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোট বেলা থেকেই তার আচার আচরণ ছিল মেয়েদের মতো। মেয়ের সাজ পোশাক পড়তে এবং তাদের সঙ্গে খেলা করতে ভালোবাসতেন। সেই ইচ্ছা শক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে বড় হয়ে গত বছর অপারেশনের মাধ্যমে তিনি নারীতে রূপান্তরিত হয়েছেন। সুবল নাম বদলে নিজের নাম রেখেছেন মেঘা শর্মা। নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন একজন নারী হিসেবে। কাজ করতে চান তার মতো রূপান্তরকামী বা ট্রান্সসেক্সুয়ালদের নিয়ে।

মেঘা জানান, ছোট থেকেই মেয়ের সাজে সাজতেন তিনি। বাড়ির লোকজন বাধা দিতেন। তখন তার মনে হতো- তিনি ছেলে নাকি মেয়ে? স্কুল-কলেজে ছাত্রদের সারিতে বসতে সঙ্কোচ বোধ করতেন। মনের মধ্যে সব সময় মেয়ে হওয়ার ইচ্ছা তাকে তাড়া করত। একপর্যায়ে তার মধ্যে নারী সত্ত্বার আবির্ভাব ঘটে। তাই সব কিছু ছাপিয়ে গত বছর ভারতে গিয়ে অপারেশনের মাধ্যমে রূপান্তরিত নারী হয়েছেন তিনি। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ এস সি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকার কবি নজরূল সরকারি কলেজে রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন তিনি। পাশাপাশি এখন একটি কোম্পানিতে চাকরিও করছেন মেঘা। তার পরিবার তাকে মেনে নিয়েছে। এয়ার হেস্টেজ বা মডেল হওয়ার স্বপ্নও রয়েছে তার। এছাড়াও রূপান্তরিতদের নিয়ে কাজ করবেন বলেও জানান মেঘা।
রূপান্তরিত নারী হিসেবে কয়েক দিন আগে প্রথম বাড়িতে আসায় তাকে দেখতে নারী-পুরুষের ঢল নেমেছে নাপিতপাড়ায়। তাকে নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।

মেঘার বাবা জগেস শীল জানান, তার দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে মেঘা বড়। সে এখন মেয়ে হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। মেঘার ইচ্ছাকে তারা মেনে নিয়েছেন।

প্রতিবেশী গৃহবধূ শান্তনা শর্মা জানান, মেঘা ছেলেদের সঙ্গে কম মিশত। মেয়েদের সঙ্গেই বেশি চলাফেরা করতেন।  

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ নিমাই জানান, মেঘা সম্পর্কে তার নাতি ছিল। এখন নাতনি। সে প্রথম বাড়িতে আসায় তাকে দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে। মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।

পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল জব্বার বলেন, যারা ছেলে এবং মেয়ের মাঝামাঝি আবস্থায় থাকে, তাদের অপারেশনের মাধ্যেম এটা করা সম্ভব। এখন দেশেও এ ধরনের অপারেশন হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।