ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

একদিকে উচ্ছেদ, আরেকদিকে প্রতিবাদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
একদিকে উচ্ছেদ, আরেকদিকে প্রতিবাদ

বরিশাল: বরিশাল নগরের ভিআইপি রোড সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করেছে সিটি করপোরেশন। তবে উচ্ছেদ অভিযান অবৈধ দাবি করে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে নগরের ত্রিশ গোডাউন এলাকা সংলগ্ন ভিআইপি রোডের পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রথম দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। এ সময় বেশ কয়েকটি টিনের ও আধাপাকা ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। অভিযানস্থলে থাকা একটি বহুতল ভবনের মালিক নিজে ভবন ভাঙার দায়িত্ব নিলে তাকে নতুন করে সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

সিটি করপোরেশনের আবুল বাশার অভিযানের বিষয়ে কিছুই জানাতে রাজি হননি। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এ বিষয়ে পরিচালিত উন্নয়ন কার্যক্রমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. মাহফুজ খান জানান, নগরের উন্নয়ন কার্যক্রমে ১৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় বধ্যভূমি থেকে ভিআইপি রোড পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করা হবে, একইসাথে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ফুটপাত ও রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ, সাগরদী খাল পুনঃখননসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা হবে।



তিনি বলেন, প্রকল্পটি নগরের উন্নয়নে করা হচ্ছে। আর যেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে, সেখানে শোভারানীর খালের জায়গা রয়েছে। খালের জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন হতে পারে না। আর এখানে এমনও নয় যে, উচ্ছেদ চালিয়ে সিটি মেয়র ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবেন। এটি উচ্ছেদ করে নগরেরই উন্নয়ন করা হচ্ছে। আর প্রকল্পটি নেওয়ার সময়ই তো কর্তৃপক্ষ সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই নিয়েছেন। সরকারি জায়গা না থাকলে এখানে উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রকল্পই নেওয়া হয়তো হতো না।

উচ্ছেদ অভিযানস্থলে মানববন্ধনকারীদের মধ্যে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা জালাল আহম্মেদ তালুকদার বলেন, এখানে কোনো সরকারি খাল ছিল না। এখানে ব্যক্তি মালিকানার জায়গা ছিল। সরকারি জায়গা হলে তা ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড হতো না এবং আমরা খাজনাও দিতে পারতাম না। আমরা যারা এখানে বাড়ি করে বসবাস করছি, তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যাংক ঋণ নিয়েছি। আর সিটি করপোরেশন প্ল্যান না দিলে বাড়ি কীভাবে করা সম্ভব এবং ঋণ নেয়াও কীভাবে সম্ভব?

খলিলুর রহমান নামে অপর একজন বলেন, সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত হোল্ডিং কর, পানির বিল দিয়ে আসছি এবং বছরের পর বছর বসবাস করছি। খাজনা পরিশোধের কাগজ রয়েছে, জমি কেনার পর রেকর্ড নিজেদের নামে পেয়েছি, তারপর এত বছর বসবাস করছি। তখন কেউ কিছু বললো না আর এখন শুনছি আমাদের বাড়িই নাকি অবৈধ জায়গার ওপর!

সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানই অবৈধ দাবি করে তিনি বলেন, কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানের আগে বিষয়টি আমরা জানতে পেরে মেয়র সাহেবের বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে ঘর দিচ্ছেন সেখানে আমাদের ঘর ভেঙে ফেলা হচ্ছে।

বধ্যভূমি ও টর্চার সেল থেকে ভিআইপি কলোনির গেট হয়ে বান্দরোড পর্যন্ত চলমান প্রকল্পের কারণে কাঁচা-পাকা ঘরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ভবন   এবং ভবনের অংশও উচ্ছেদের আওতায় পড়েছে। স্থানীয় আদি বাসিন্দারা জানিয়েছেন, টর্চার সেল থেকে ভিআইপি কলোনির পাশ দিয়ে একটি খাল বান্দরোড পর্যন্ত ছিল। যে খালটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভড়াট করা হয়েছে। সেইসাথে ওই খালের জমি অসাধু চক্র নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়ে কয়েক হাত ঘুরিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে যারা এ জমি কিনে বাড়িঘর করেছেন তারা কেউ এ কাজের সঙ্গে জড়িত নন, তারা খাল থাকার বিষয়টি সম্পর্কে অবগতও নন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।