ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কাপ্তাই হ্রদের ‘জঞ্জাল’ কচুরিপানা হতে পারে সম্পদ

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
কাপ্তাই হ্রদের ‘জঞ্জাল’ কচুরিপানা হতে পারে সম্পদ হ্রদে কচুরিপানা। ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানা অনেক বছর ধরে নৌকাসহ অন্যান্য নৌযান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে, যা অত্যন্ত যন্ত্রণার কারণ। তবে চিন্তা শক্তি বদলালে  কচুরিপানাকে সম্পদে পরিণত করা যায়।

এজন্য চাই সৃজনশীল চিন্তা-ধারা, হতে হবে উদ্যোগী। কারণ কচুরিপানা জঞ্জাল নয়, এটি সম্পদ।  

সরকারি, বেসরকারি কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানার সঠিক ব্যবহার করা গেলে রাঙামাটিবাসী নতুন অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারবে।

কাপ্তাই হ্রদে যেভাবে কচুরিপানার আগমন ঘটে:

১৯৬২ সালের দিকে কাপ্তাই বাঁধ দেওয়ার ফলে কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি হয়। এরপরই হ্রদটি হয়ে ওঠে পুরো রাঙামাটিবাসীর জন্য আশির্বাদ। হ্রদটি একদিকে যেমন জেলার সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে, তেমনি মৎস্য এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর মিঠা পানির কৃত্রিম হ্রদ। হ্রদটির জন্মলগ্ন থেকে কচুরিপানার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ রাঙামাটিবাসী। নৌ-যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটায় কচুরিপানা। যে কারণে যোগাযোগ অক্ষুণ্ন রাখতে গিয়ে নৌপারের যাত্রীদের চরম হিমসিম খেতে হয়।  কচুরিপানার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে চান রাঙামাটিবাসী:

অনেক বছর ধরে রাঙামাটিবাসী কচুরিপানার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে নানান উপায় বের করতে থাকেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। যদিও কয়েক বছর আগে কাপ্তাই হ্রদ থেকে কচুরিপানা অপসারণের জন্য সরকার কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে একটি হারভেস্টার মেশিন দেয়। বিধি বাম! মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানার জঞ্জাল নিয়ে স্থানীয়, জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা সভায় কচুরিপানা অপসারণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জেলায় সফরকালে সংশ্লিষ্ট সরকারি একাধিক মন্ত্রীকে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। তবু ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বহাল তবিয়তে রয়েছে এখানকার কচুরিপানা। কিছুতেই রুখে দেওয়া যায়নি এ হ্রদে কচুরিপানার রাজত্ব।  প্রতিবছর নদী পথে একাধিক নৌকা (ইঞ্জিন চালিত), জাহাজ কচুরিপানায় আটকা পড়ে। যাত্রীরা পড়েন চরম বিপাকে। নৌকর্তৃপক্ষ দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার করে জাহাজ চলাচলের পথ সুগম করে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে সেই পথ আবার কচুরিপানায় বন্ধ হয়ে যায়। কারণ বর্ষাকালে কচুরিপানার জঞ্জাল আর গ্রীষ্মকালে নদীর পানি শুকিয়ে গেলে নৌপথে যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। তাই নৌপথে যাতায়াত নির্বিঘ্ন রাখতে রাঙামাটিবাসী ও নৌ সংশ্লিষ্ট সবার এক দাবি, তারা কাপ্তাই হ্রদকে কচুরিপানামুক্ত করতে চান।

কচুরিপানা জঞ্জাল নয়, সম্পদ:

একটা সময় কচুরিপানা পুরো দেশের জন্য জঞ্জালে পরিণত হয়েছিল। নদী-নালা, খাল-বিলে কচুরিপানার জন্য চাষবাদ যেমন মুশকিল ছিল, তেমনি নদী পথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে যুগের বিবর্তনে বর্তমানে কচুরিপানার সঠিক ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেকে কোটিপতির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন। বর্তমানে কচুরিপানা দিয়ে কাগজ, দৃষ্টি নন্দন ফুলের টব, ব্যাগ বালতিসহ নানা ধরনের সামগ্রী উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশীয় বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা কম থাকলেও রপ্তানি হয়ে থাকে ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা, কানাডা, নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে। একইভাবে কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানা দিয়েও বিভিন্ন পণ্য বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে, কচুরিপানা জঞ্জাল নয়, বরং সম্পদে পরিণত হবে। কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলার উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, আপাতত কচুরিপানা নিয়ে কৃষি বিভাগের কোনো প্রকল্প বা কাজ নেই। রাঙামাটির কৃষকরা কচুরিপানাকে সার হিসেবে ব্যবহার করছেন।  

এক প্রশ্নের জবাবে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সরকার কচুরিপানা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নিলে আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে কাজ করব।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।