সিলেট: সিলেটে নিজের দেড় বছর বয়সী শিশুকন্যাকে হত্যার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন নাজনীন আক্তার (২৮) নামে এক নারী।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট শহরতলীর শাহপরাণ নিপোবন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বুধবার সকালে পারিবারিক কলহের জেরে নাজনীন তার মেয়ে সাবিহাকে বালিশচাপা দেন। এ সময় সাবিহার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে সাবিহাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান নাজনীনের বোন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবিহাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় নাজনীনও হাসপাতালে আসেন। পরে তিনি হাসপাতালে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় গণমাধ্যমের সামনে নাজনীন মেয়েকে হত্যার বিষয়টি স্বীকারও করেন।
পুলিশ জানায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কালিকৃষ্ণপুর এলাকার নাজনীনের সঙ্গে একই উপজেলার বলদি ইউনিয়নের সাব্বির আহমদের বিয়ে হয় ২০১৫ সালে। বিয়ের পর থেকে তারা শাহপরাণ নিপোবন এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। নাজনীন একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তার স্বামী সাব্বির কাতারপ্রবাসী। এর আগে নাজনীনের একটি বিয়ে হয়ে ছিল। সেই সংসারেও তার একটি সন্তান রয়েছে।
সিলেট কোতোয়ালি থানায় নাজনীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিয়ের পর আমার স্বামী বিদেশ চলে যান। চার বছর সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি আমার ভরণপোষণ দেয়নি। আমি স্কুলে শিক্ষকতা করে এবং টিউশনি করে চলছিলাম। পরে দেশে ফিরে আমাকে অনেক বুঝিয়ে আবার সংসার শুরু করেন তার স্বামী। তখন আমি গর্ভবতী হই। আমাকে গর্ভবতী অবস্থায় রেখেই তিনি আবার কাতার চলে যান’।
নাজনীন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে সাব্বির অভিযোগ তোলেন- আমার গর্ভের সন্তান তার নয়। আমি তখন ডিএনএ টেস্টের কথা বলি। কিন্তু সাব্বির ও তার পরিবার তা না করে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে থাকে। আল্লাহর কী রহমত! জন্মের পর দেখা গেল মেয়ের চেহারা অবিকল সাব্বিরের মতো। চোখ, ঠোঁট, মাথার চুল, হাসি সব একই রকম’।
তিনি বলেন, ‘সাব্বির ১৫ দিন আগে দেশে এসেছেন। কিন্তু একবারও মেয়েকে দেখতে আসেননি। বরং আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছেন। এ দুঃখে আমি আমার মেয়েকে হত্যা করেছি’।
মেয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে নাজনীন বলেন, ‘আমি কাউকে ফাঁসাবো না। সাব্বিরকেও ফাঁসাবো না। তাকে ফাঁসালেও তিনি অল্প শাস্তিতে পার পেয়ে যাবেন। তার বিচার আল্লাহ করবেন। আমি আমার মেয়েকে খুন করেছি। আমার ফাঁসি হোক। ’
সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, ‘পারিবারিক কলহ থেকেই এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। শিশুর মা নাজনীন মেয়েকে হত্যার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। আমরা তাকে আটক করেছি। তার স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় হেফাজতে রেখেছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে’।
তিনি বলেন, ‘তারা যেহেতু শাহপরাণ থানা এলাকায় থাকেন। আমরা সেই থানাকেও অবগত করেছি।
আরও পড়ুন>> **সিলেটে শিশুকে গলাটিপে হত্যা, মা আটক
বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
এএটি