ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ‘এভাবে রকিবের ক্রিকেট খেলার ছোট্ট মাঠটা কেউ কেড়ে নিবে? এভাবে অপুর শৈশবের ঈদের নামাজ পড়া মাঠটা দখল হয়ে যাবে? এভাবে হেলালের সন্ধ্যার আড্ডার জায়গাটা হারিয়ে যাবে? সাজাদ্দের টিফিন পিরিয়ডে সাইকেল চালানোর জায়গাটা ওরা আরো সংকুচিত করে ফেলবে? সাব্বির আর রইসউদ্দিনের ব্যাডমিন্টন খেলা কিংবা স্কুলের ছোট ছোট ছেলেগুলোর ফুটবল খেলার দিন কি তবে শেষ? মাখন সাহেবের নামে করা মঞ্চটার সামনের এতটুকু জায়গাটাও কি এখন শ্রমিক আর প্রতিবাদী জনগণের জন্য রইবে না?’
রাকিব, অপু, হেলাল আর সাজ্জাদের মতো অনেকেই এই একটুকরো মাঠ তার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অক্ষত রেখে যেতে চান তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। যেমনটা তাদের বাবারা তাদের জন্য রেখে গিয়েছিলেন।
এমনিভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের মনের রাগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেছেন মো. শরীফ হায়দার অপু নামের এক ব্যক্তি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের লোকনাথ টেংকের পাড় মাঠে করোনার টিকা কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মাটি খোড়ার কাজ শুরু হলে অনেকটা আক্ষেপের সঙ্গে এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান তিনি। শহরের টেংকের পাড় এলাকার বাসিন্দা অপুর মতো বহু স্থানীয় জনসাধারণ খেলার মাঠে টিকা কেন্দ্র গড়াকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন।
বিক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা জানান, এমনিতে দিনের পর দিন খেলার মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি খেলার মাঠ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দানবীর লোকনাথ রায় চৌধুরী টেংকের পাড় মাঠ। এখানে বিভিন্ন এলাকার ছেলেরা এসে কেউ ক্রিকেট খেলে, কেউ ফুটবল কিংবা ব্যাডমিন্টনসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করে। এমনিতেই দিনের পর দিন খেলার মাঠটি সংকুচিত হয়ে আসছে। তার মধ্যে এভাবে খেলার মাঠ দখল স্থপনা নির্মাণ খুবই দুঃখজনক। এখানে টিকা কেন্দ্র স্থাপিত হলে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটবে। মানুষের ভিড়ে খেলাধুলার পরিবেশ থাকবে না। সে সঙ্গে এই মাঠ চত্ত্বরে রয়েছে টেংকের পাড় জামে মসজিদ। যেখানে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে মুসল্লিদের ঢল নামে। ফলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে চলাচল বিঘ্নিত হবে। যদিও মাঠটি পৌরসভার নিয়ন্ত্রাধীন। এখানে প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যাক বিভিন্ন বয়সের মানুষের আগমন ঘটে। এই ছোট মাঠটি যেন তাদের বিনোদনের অন্যতম স্থান।
স্থানীয়রা জানান, পৌরসভার আরো অনেক খালি জায়গা রয়েছে। খেলার মাঠটিকে এভাবে ধ্বংস না করে অন্য কোথাও টিকা কেন্দ্রটি স্থাপনের করা হোক। খেলার মাঠ সংকুচিত করে এখানে স্থাপনা নির্মাণের কাজ হলে সকলকে সঙ্গে নিয়ে আন্দেলন গড়ে তোলা হবে।
জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি ডা. বজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু এটা একটা খেলার মাঠ। সেক্ষেতে সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধান আশা করছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বাংলানিউজকে বলেন, জনস্বার্থে টিকা কেন্দ্রটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভাবছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, এমনিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারের বেধে দেওয়া টিকা কভারেজের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। আমরা সরকারের সেই টার্গেট পূরণে সর্বসাধারণকে টিকার আত্ততায় আনতে এই টিকা কেন্দ্রটি সাময়িক সময়ের জন্য স্থাপন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
এনটি