বরিশাল: মাত্র সাড়ে ৯ বছর বয়সে রাজধানীর মিরপুরের কামাল হোসেন সোহেল নামের এক ব্যক্তির বাসায় কাজে দেওয়া হয় রাজশাহী জেলার মোহনপুর থানাধীন দুর্গাপুর গ্রামের রফিজ মন্ডল ও সুফিয়া বেগম দম্পতির বড় সন্তান বেবিকে।
কথা ছিল বাসায় কাজ করানোর পাশাপাশি পড়াশোনা করানো হবে তাকে।
জানা গেছে, পালিয়ে গিয়ে বেবি ঢাকার মিরপুরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। সেখানে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামের ওয়াজেদ আলী সরদারের স্ত্রী সাহানুর বেগমকে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে বেবি। এরপর তাকে সমস্ত ঘটনা বললে বেবিকে নিয়ে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় চলে আসেন সাহানুর বেগম। সেই থেকে নিজের সন্তানের পরিচয়ে বেবিকে লালন-পালন করেন সাহানুর বেগম। পরবর্তীতে একই উপজেলার নগরবাড়ি গ্রামের চাঁন মিয়া ফকিরের ছেলে ব্যবসায়ী সোহেল ফকিরের সঙ্গে বিয়েও দেওয়া হয় তাকে। বিবাহিত জীবনে বেবী-সোহেল দম্পতির একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে।
গত ৭ দিন আগে স্থানীয় এক লোকের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে কথা বলে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে রাজশাহী থেকে আগৈলঝাড়ায় ছুটে আসেন বেবী বাবা-মাসহ স্বজনেরা। পরে মঙ্গলবার রাতে বেবী তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন পালিত মা। বুধবার ভোরে স্বামী সন্তানসহ বাবা-মায়ের সঙ্গে জন্মস্থান রাজশাহী জেলার মোহনপুর থানার দুর্গাপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে কিছুদিন বেড়ানোর পরে আবারো ফিরে আসবেন উপজেলার নগরবাড়ি গ্রামে স্বামীর এলাকায়।
বেবির পালিত মা সাহানুর বেগম জানান, ২০০২ সালে ঢাকার মিরপুরে পারিবারিক একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা হয় বেবির সঙ্গে। এ সময় মেয়েটির মুখে কাজের বাসার কর্তার অত্যাচারের বর্ণনা শুনে কষ্ট লাগে। সেজন্যই নিজের সন্তানের মতো মানুষ করতে আগৈলঝাড়ায় তার বাড়িতে নিয়ে আসে তাকে। সেই থেকে নিজের ৬ সন্তানের সঙ্গে তাকেও সন্তানের মতোই লালন পালন করে বড় করেন।
সাহানুর বেগমের ছেলে ও আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন সরদার জানান, মা বেবিকে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকে তারাও বোনের মতোই ভালোবাসতেন তাকে।
বেবির মা সুফিয়া বেগম ও বাবা রফিজ মন্ডল জানান, দীর্ঘদিন খুঁজেও কোনোভাবেই মেয়ের সন্ধান না পেয়ে কাজের বাসার মালিক কামাল হোসেনসহ ৩ জনকে আসামি করে রাজশাহী জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের ৭ বছর পর অভিযুক্তদের চাপে মামলা তুলে নেন তারা। সম্প্রতি এলাকার এক লোকের মাধ্যমে জানতে পারেন মেয়ের খবর। তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গত শুক্রবার আগৈলঝাড়ায় আসেন তারা। এর মঙ্গলবার রাতে মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দেন তার পালিত মা ও স্বজনেরা।
বেবি জানান, মারধর ও নির্যাতন সইতে না পেরে ওই বাসা থেকে পালিয়ে এসে পালিত মা সাহানুর বেগমের কাছেই সন্তানের মতো মানুষ হন। তবে তার জীবনের স্বপ্ন ছিল জন্মদাতা বাবা ও গর্ভধারিণী মাকে দেখার। ছোট বেলায় হারিয়ে গিয়ে বাবার নাম ভুলে গেলেও নিজ গ্রামের নাম মনে ছিল তার। একদিন ছোট বেলার সমস্ত ঘটনা তার সন্তানের শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করলে ওই শিক্ষকের রাজশাহীর এক বন্ধুর সহায়তায় খোঁজ পান বাবা- মায়ের।
এ বিষয়ে গৈলা মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল হোসেন টিটু বলেন, ২০ বছর পর বাবা-মাকে ফিরে পাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে রাজশাহী জেলার মোহনপুর থানার দুর্গাপুর গ্রামের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে বেবীর সার্বিক খোঁজ-খবর রাখার কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
এমএস/কেএআর