বরগুনা: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ স্কুলশিক্ষক বাবু বঙ্কিম চন্দ্র মজুমদার (৫৮) মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দিকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
বরগুনার ফুলঝুড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক বাবু বঙ্কিম চন্দ্র মজুমদার তার মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন বরগুনার ফুলঝুড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল সালেক বিএসসি।
তিনি জানান, শিক্ষক দম্পতি অগ্নিদগ্ধ হবার একমাস পরে তার স্ত্রী মারা যায়। তিনি ডায়াবেটিসসহ কিডনি রোগ ভুগছিলেন। স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন।
গণিতের জাহাজ হিসেবে পরিচিত মৃত শিক্ষকের স্ত্রীও বরগুনা গগন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। তারা দুজনেই লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডের সময় দগ্ধ হন।
স্ত্রী মনিকা রানী শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় সেখানে তার মৃত্যু হয়।
মনিকা রানি হালদার বরগুনা পৌর শহরের গগন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী বরগুনা সদর উপজেলার ১ নম্বর বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুরি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে অবসরে যান গণিতের সিনিয়র শিক্ষক বাবু বঙ্কিম চন্দ্র মজুমদার।
তিনিও একই লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) মৃত শিক্ষকের মরদেহ বরগুনা পৌঁছনোর কথা রয়েছে। স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষককে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। এর ২২ দিন আগে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে স্কুলশিক্ষিকা মনিকা রানির মরদেহ এসে পৌঁছায়।
এ বিষয় মুঠোফোনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এসএম আইউব হোসেন বলেন, বরগুনার বাবু বঙ্কিমচন্দ্র মজুমদার নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে ১৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
অন্যদিকে স্কুলশিক্ষক বাবু বঙ্কিম চন্দ্র মজুমদারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। তিনি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ও শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বঙ্কিমচন্দ্রের মৃত্যুর খবর জেনেছি। তার মরদেহ বরগুনায় পৌঁছানোর পর শেষকৃত্যর জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মরদেহ এসেছে বরগুনায়। এরমধ্যে ২৪ জনের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় তাদের গণকবরে দাফন করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করে তাদের স্বজনরা মরদেহ নিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত নিহতদের পরিবারকে দাফন কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী অতিক্রমকালে হঠাৎ আগুন লাগে। এ ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ৪৯ জনের মরদেহ এ পর্যন্ত বরগুনায় এসে পৌঁছেছে।
আর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বরগুনা, ঝালকাঠি ও ঢাকায় তিনটি মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
এনএইচআর