ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনায় সাইনবোর্ডে উপেক্ষিত বাংলা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
খুলনায় সাইনবোর্ডে উপেক্ষিত বাংলা খুলনায় সাইনবোর্ডে উপেক্ষিত বাংলা

খুলনা: খুলনার আহসানুল্লাহ কলেজের বিপরীত পাশে খুলনা সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বহুতল এ হাসপাতালটির সামনে ইংরেজিতে লেখা বড় সাইনবোর্ড।

সেখানে হাসপাতালটির নাম ইংরেজিতে লেখা থাকলেও বাংলায় লেখা নেই। অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক। প্রতিষ্ঠানটির জন্মলগ্ন থেকে এভাবে সাইনবোর্ড ব্যবহার করলেও কারও সেদিকে নজর নেই। এ হাসপাতালটি খুলনার সবচেয়ে বৃহৎ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

শান্তিধামের মোড়ে ডলিস মো মো, সোনাডাঙ্গার মজিদ সরণি রোডে রেস্টুরেন্ট ধাবা, খুলনা গ্র্যান্ড দরবার, ফ্যাশান হাউজ ডিমান্ড, ইয়েলো, লোয়ার যশোর রোডে ও লা লা, কফি গ্লোরি, রোভার্স ক্যাফে সব স্থানেই ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ড ঝুলছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মতো মহানগরীর শত শত প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ইংরেজিতে লেখা। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইনবোর্ড বেশি লেখা হয়েছে বিদেশি ভাষায়। অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিষ্ঠান বা দোকানপাটের সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে  ইংরেজি ও মিশ্রভাষায় লেখা সাইন বোর্ড অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি। এই ভাষার জন্য সংগ্রাম করে জীবন দিতে হয়েছে জাতির সূর্য সন্তানদের। ভাষা শহীদরা রক্তের অক্ষরে মাতৃভাষার মর্যাদা দিয়ে গেছেন। যে কারণে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন হয় দুনিয়াজুড়ে। কিন্তু দেশেই যেন পদে পদে উপেক্ষিত বাংলা। সর্বত্রই এখনও ইংরেজি ভাষার দাপট। বাংলা ভাষা চর্চার দুরবস্থা দেখে ক্ষোভ রয়েছে অনেকের মাঝে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিকাশ রায় বাংলানিউজকে বলেন, একটি জাতি উন্নত হতে গেলে বৈদেশিক ভাষার চল ও দক্ষতা অবশ্যই কাম্য। কিন্তু মার্তৃভাষার চল এ ক্ষেত্রে ক্ষীয়মান হবে এমনটিও কাম্য নয়। আমরা জাপানকে নিসন্দেহে উন্নত দেশ হিসেবে জানি, চীনকেও জানি, কোরিয়াকেও জানি। এসব দেশে মার্তৃভাষা ব্যবহারে রয়েছে কঠোর চল এবং প্রেম। আমাদের দেশে মার্তৃভাষা প্রেমের দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। বর্তমানে আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানের নাম ইংরেজিতে কিংবা অন্য ভাষায় রাখার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। একটু ইংরেজি আদলে কিংবা ভিন্ন ধরনের নাম রেখে মানুষকে হকচকিয়ে দেয়া কিংবা দৃষ্টি আকর্ষণ করা এখন রীতিমতো অলিখিত রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। নিজের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে যে দেশ পৃথিবীতে পরিচিত, যে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস পালন করে পৃথিবীব্যাপী মানুষ, সে দেশে নিজস্ব ভাষা ব্যবহার হওয়া উচিত ছিল জাপান, চীন কিংবা কোরিয়ার মত জোরদারে এবং ভালবাসার সঙ্গে। চাকচিক্যময় লেফাফাদুরস্ততায় যুব মানুষকে ভোলাতে গিয়ে মানুষ অস্বীকার করা শুরু করেছে নিজের অস্তিত্বকেই।  প্রাণের ভাষা বাংলা এ মলিনতা দূরে ঠেলে সমহিমায় ভাস্বর হোক এটাই এখন কাম্য।

সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর এলাকায় বাংলায় সাইনবোর্ড লেখার জন্য সাত দিন সময় দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি দিচ্ছে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ।

খুলনায় এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) নাজিবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানাবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
এমআরএম/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।