ঢাকা: জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকায় এসে ফল বিক্রি শুরু করলেও একপর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন মাদকের বাণিজ্যে। খুচরা বিক্রেতা হিসেবে শুরু করে বর্তমানে ঢাকার অন্যতম মাদক বিক্রেতা মো. আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির (৩৩)।
মাদক বিক্রির টাকা দিয়ে মনির শরীয়তপুরে গ্রামের বাড়িতে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এমনকি বাবার কৃতি সন্তান বোঝাতে এবং এলাকায় প্রচারের উদ্দেশ্যে মাদকের টাকায় বাবার কবরে মাজার তৈরি করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার মধুবাজারের একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির ও তার সহযোগী জুবায়ের হোসেনকে (৩৩) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড গুলি, ১৮ হাজার ৭৭০ পিস ইয়াবা, ৬ গ্রাম আইস এবং মাদক বিক্রির নগদ ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যারের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, পিচ্চি মনিরের পরিবার জীবিকার সন্ধানে ১৯৯৫ সালে ঢাকায় এসে লালবাগ শহীদনগর এলাকায় বসবাস শুরু করে। বাবার ফলের ব্যবসায় সহযোগিতা করত মনির। এক সময় এলাকায় চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়িয়ে বখাটেদের নিয়ে একটি অপরাধ চক্র গড়ে তোলে এবং মাদক ব্যবসা শুরু করে সে।
২০১২ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ডিলরদের কাছ থেকে মাদক নিয়ে খুচরা মাদক সেবীদের কাছে বিক্রয় করত। ২০১৬ সালে কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার মাদক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। তখন থেকে টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি শুরু করে। ইয়াবা সরবরাহের জন্য তার ভাদা বাসা ব্যবহৃত হতো।
এই কর্মকর্তা জানান, মনির প্রতিমাসে কয়েকটি ইয়াবার চালান টেকনাফ থেকে ঢাকায় এনে খুচরা ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করতেন। প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মোহাম্মদপুরের ভাড়া থেকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ তাকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ কারণে তিনি এক এলাকায় এক-দুই বছরের বেশি অবস্থান করতেন না।
মাদক বিক্রির টাকায় মনির নিজ এলাকার বাড়িতে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। সে তার বাবার কৃতি সন্তান জনসাধারণকে এটা জানানোর জন্য এবং এলাকায় প্রচারের উদ্দেশ্যে মাদক টাকা দিয়ে তার বাবার কবরে একটি মাজার নির্মাণ করছেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মনির ২০১৮ সাল হতে অস্ত্র ব্যবসা শুরু করে। ২০১৮ সালে অবৈধ পিস্তলসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে একবার গ্রেফতার হয়ে ৭ মাস জেলে ছিলেন। ২০২০ সালে অস্ত্র ও মাদক মামলায় আবারো গ্রেফতার হয়ে এক বছর জেলে থাকেন। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত সর্বমোট ৩টি মামলা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
পিএম/এসআইএস