ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রলার ডুবি: ঘটনার বর্ণনা দিলেন ফিরে আসা জেলে

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
ট্রলার ডুবি: ঘটনার বর্ণনা দিলেন ফিরে আসা জেলে

পাথরঘাটা (বরগুনা): রাত তখন প্রায় সাড়ে ১০টা। ট্রলারের সব জেলেরা জাল ফেলে ঘুমিয়ে পড়েছে ঠিক এমন সময় প্রচণ্ড বেগে ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়ে যায়।

মুহূর্তের মধ্যেই ওই ট্রলারে থাকা জেলেরা ট্রলার থেকে সাগরে পড়ে যায়। দীর্ঘ ২১ ঘণ্টা পর ভাসমান অবস্থায় অপর একটি ট্রলারের জেলেরা উদ্ধার করে ৫ জেলেকে।

এমন বিভিষিকাময় ঘটনার বর্ণনা দিলেন উদ্ধারকারী মাঝি আল আমিন সরদার ও ফিরে আসা জেলেরা।

৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনার পাথরঘাটা থেকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া, দুবলার চর এবং আলোর কোল দমকা হাওয়ার কবলে পড়ে মাছ ধরার ১৮টি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে ২৭ জন জেলে নিখোঁজ ছিলেন। এ পর্যন্ত ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৮ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। তাদের সবার বাড়ি বাগেরহাট জেলায়। উদ্ধারকারী মাঝি আল আমিন সরদারের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামে।

ফিরে আসা পাথরঘাটার মিজান মল্লিকের মালিকানা এফবি মা বাবার দোয়া ট্রলারের মাঝি আল আমিন সরদার সেই বিভিষিকাময় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, মাছ ধরার জন্য জাল ফেলে অপেক্ষা করছি। আমাদের ট্রলারে আমি ছাড়াই সবাই ঘুমিয়ে ছিল। ঠিক এমন সময় প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যেই আশপাশের ট্রলার দিগবিদিক হয়ে যায়। এমন সময় আমার ট্রলারের অন্য জেলেদের ঘুম থেকে উঠাই। আমাদের ট্রলার সুন্দরবনের কাছাকাছি হওয়াতে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরাপদে চলে যেতে পারলেও অনেক ট্রলার উল্টো হয়ে ডুবতে থাকে।

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে পরদিন শনিবার (৫ ফেরুয়ারি) দুপুরের দিকে সুন্দরবন সংলগ্ন সাগরে জাল ফেলি। ওইদিন সন্ধ্যার আগে আমাদের ট্রলারের কাছাকাছি মানুষের মতো ভাসছে দেখি। প্রথমে ভাবছি হয়তো মানুষের মরদেহ। পরে উদ্ধার করে ট্রলারে উঠানোর পর জীবিত দেখে ট্রলারে থাকা গরম কাপড় পরিয়ে দেই এবং আশপাশে আগুন দিয়ে তাপ দেই। কয়েক ঘণ্টা পর কিছুটা সুস্থ হয়ে তার নাম বলে তুষার হালদার। পরে সে জানায়, তারা এক সঙ্গে ৫ জন ছিল, এখনো তাদের ৪ জন নিখোঁজ রয়েছে।

তিনি জানান, তারা একইসঙ্গে ট্রলার থেকে লাফিয়ে পানিতে পড়ে কয়েক ঘণ্টা একসঙ্গেই ভাসছিলেন। পরে উদ্ধার জেলে তুষারকে নিয়ে আল আমিন সরদারের নেতৃত্বে ১১জন জেলে অন্যদের খুঁজতে শুরু করে। পরে আলাদা আলাদাভাবে অপর চারজন জেলেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তারা সবাই শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল এবং অসুস্থ ছিল।

উদ্ধার জেলেরা হলেন- অনিমেষ হালদার (৪৫), পবিত্র হালদার (৩৫), তুষার হালদার (২৫), অমিত বিশ্বাস (৫০) ও আবুল (৩০)। তাদের সবার বাড়ি বাগেরহাটে। তাদের ট্রলারের নাম এফবি অনিমেষ।

উদ্ধার জেলে অনিমেষ মোবাইল ফোনে বলেন, আমরা ২১ ঘণ্টা পানিতে ভাসছিলাম। এতো শীতেও সৃষ্টিকর্তা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। যদিও ট্রলার এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। পাথরঘাটার আল আমিন মাঝিসহ জেলেরা আমাদের উদ্ধার করে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যায়। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, আমরা এখন শারীরিকভাবে সুস্থ আছি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।