খুলনা: খুলনা থেকে প্রতিদিন ঢাকা রুটে ট্রেনের যাত্রী কয়েক হাজার। কিন্তু এ রুটে সকাল ও রাতে দুটি ট্রেন থাকলেও তাতে আসন পর্যাপ্ত নয়।
এ বিষয়ে খুলনা রেল স্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ রুটে আরেকটি ট্রেনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। সম্প্রতি রেল সচিব যখন খুলনায় এসেছিলেন তখন বলেছিলাম বেনাপোল থেকে যে আন্তঃনগর ট্রেনটি ঢাকাগামী সেটি বেনাপোল-ঢাকা না দিয়ে খুলনা-ঢাকা দিলে যাত্রীদের যে বেশি চাহিদা আছে তা পূরণ করা যেত। বুঝলাম স্যার বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। রেল সচিব বলেছেন বিষয়টি দেখবেন।
স্টেশন মাস্টার বলেন, আমি একটি অ্যাডভান্স কথা বলি পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের খুলনা-ঢাকা রুটে আরেকটি ট্রেন বাড়বে। বেঁচে থাকলে লিখিত প্রস্তাব দেব। তখন খুলনার মানুষের কী উপকার হবে তা বলে বোঝানো যাবে না। বর্তমানে দুটি ট্রেনে সব যাত্রী নেওয়া যায় না। রাতে একটা গাড়ি, শুধু তাতে তো হয় না। পিরোজপুর, বরিশাল থেকে শুরু করে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা পুরো এলাকার লোক যাতায়াত করে ট্রেনে। এ জন্য আরেকটি গাড়ি পাওয়া গেলে চাহিদা মোটামুটি পূরণ করা যেত।
স্টেশন মাষ্টার আরও বলেন, খুলনা রেল স্টেশনে টিকিট বিক্রি ওপেন হলেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। ৫০ শতাংশ অনলাইনে, আর ৫০ শতাংশ স্টেশন থেকে টিকিট বিক্রি হয়। শতভাগ টিকিট বিক্রি হলেও টিকিট প্রত্যাশীর ২০-২৫ ভাগেরও বেশি খুলনা স্টেশন থেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। খুলনা থেকে প্রতিদিন (সাপ্তাহিক বিরতি ছাড়া) যাত্রীবাহী ১১ জোড়া ট্রেন ঢাকা, রাজশাহী, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী), সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন রুটে যাওয়া-আসা করে। এরমধ্যে দুটি ট্রেন (চিত্রা ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস) ঢাকায় যাওয়া আসা করে। সবচেয়ে বেশি টিকিটের চাহিদা এই ট্রেনের। সব টিকিট বিক্রি হলেও ঢাকাগামী যাত্রীর ২৫ ভাগ টিকিটের চাহিদা পূরণ হয় না। বিশেষ করে রাতের ট্রেনের টিকিটের চাহিদা বেশি।
সড়ক পথে যাত্রায় যানজট, অতিরিক্ত ভাড়া, দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি হওয়ায় দিন দিন রেল ভ্রমণে খুলনার মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। ট্রেনে যাতায়াত আরামদায়ক হওয়ায় বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ-নারী-অসুস্থ-প্রতিবন্ধী শিশুসহ সবার কাছেই এ বাহন জনপ্রিয়। যাত্রীর সংখ্যা বাড়ায় বিশেষ প্রয়োজনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হলেও খুলনা-ঢাকা রুটে বাড়েনি ট্রেনের সংখ্যা।
যাত্রীর চাহিদা ও চাপ সামাল দিতে এ রুটে বর্তমানে চালু এক জোড়া ট্রেনের (সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস) পাশাপাশি আরও অন্তত এক জোড়া ট্রেন চালুর দাবি জানান সাধারণ যাত্রীরা।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের গ-বগির যাত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী এম রহমান বলেন, খুলনা স্টেশন থেকে ট্রেনের টিকিট পাওয়া সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তি মানুষের নাগাল চলে আসায় অনলাইনে যে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয় তা ওপেন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে যায়। বাকি ৫০ শতাংশ স্টেশনে এসে কিনতে হয়। যা ওপেন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। অনেক সময় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাওয়া যায় না। আজকের (শুক্রবার) যাত্রার টিকিট অনেক কষ্ট করে ৭ ফেব্রুয়ারি কিনেছি। মাঝে টিকিট না পেয়ে ঢাকায় যেতেই পারিনি।
তারও দাবি খুলনা-ঢাকা রুটে আরও এক জোড়া ট্রেন দ্রুত চালু করা হোক।
খুলনা রেলস্টেশনের সহকারী মাস্টার আশিক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে রেলে শতভাগ যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। ট্রেনে যাতায়াত আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্যের হওয়ায় খুলনার মানুষের চাহিদার তুঙ্গে রেল ভ্রমণ। খুলনা থেকে ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকিট দেওয়া যায় না। এ রুটে আরও অন্তত একটি ট্রেন চালু হলে যাত্রীরা কিছুটা স্বস্তি পেতেন।
খুলনা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহ। শুধু তাই নয়, মোংলা বন্দর, চিংড়ি শিল্প, সুন্দরবনসহ প্রাকৃতিক কারণে খুলনা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ খুলনা থেকেই তাদের কাজকর্ম পরিচালন করে থাকেন। এছাড়া চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষের প্রতিনিয়তই ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। এরই মধ্যে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বেনাপোল সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু হলেও অজ্ঞাত কারণে খুলনা বঞ্চিত থাকায় ক্ষোভের আগুন জ্বলছে খুলনাবাসীর মনে। তাদের দাবি অবিলম্বে খুলনা-ঢাকা রুটে অন্তত আরও একটি ট্রেন অবিলম্বে চালু করা হোক।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড