লক্ষ্মীপুর: প্রায় ১৫ বছর আগে ভিটেমাটি হারা হয়েছেন কৃষক মো. সিরাজ মিয়া। মেঘনা নদী তাদের সব কেড়ে নিয়েছে।
ভাঙা বেড়া এবং পলিথিনে মোড়ানো ছোট্ট একটি ঘরে মানবেতর বসবাস এ পরিবারটির। অভাবের পাশাপাশি ঝড়বৃষ্টি এবং শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম।
সিরাজ মিয়ার সংসার চলে কৃষি কাজ করে। নিজের কৃষি জমি না থাকায় অন্যের জমি চাষ করে কোনমতে চলে তাদের দিন। তাই জমি কিনে কোথাও ঘর করার মতো ব্যবস্থা নেই তাদের। শিল্পী বেগম (১৫) ও রোজিনা (১০) নামে তাদের দুই মেয়ে রয়েছে। মেয়েরাও বড় হচ্ছে। কিন্তু তাদের থাকার মতো ছোটো ওই ঘরে নেই পর্যাপ্ত জায়গা।
সরকারিভাবে ভূমিহীনদের জন্য ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও এ পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি কোন ঘর। যদিও তাদের বিষয়টি বাংলানিউজের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হলে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
সিরাজ-শাহেদা দম্পতির বসবাস লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর লরেন্স ইউনিয়নের নবীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম পাশে। এটি মেঘনা নদীর ঠিক কুল ঘেঁষে অবস্থিত।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ বছর থেকে তারা এ ঘরটিতে বসবাস করে আসছে। প্রতি বছর জমির মালিককে দুই হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। এর আগেও একাধিক স্থানে উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করছেন তারা।
শাহেদা বেগম বাংলানিউজকে জানান, তার স্বামীর বাড়ি কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নের বাঁশতলা এলাকায়। প্রায় ১৫ বছর আগে নদীতে ভিটেমাটিসহ সবকিছু বিলীন হয়ে গেলে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। সেখানেও ভাঙনের কবলে পড়েন। সেখান থেকে একাধিক স্থান পরিবর্তন করে নবীগঞ্জ এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন। নদীর কুলে একটি ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে কোনমতে বসবাস করছেন তারা।
তিনি বলেন, ছোট্ট এ ঘরে চারজন থাকার মতো অবস্থা নেই। মেয়েরা বড় হচ্ছে, তাদের জন্যেও আলাদা ঘর প্রয়োজন। এছাড়া ঝড়বৃষ্টি এবং শীতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বৃষ্টিতে পানি ঢুকে। আর নদীর শীতল বাতাসে শীতে অনেক কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই। স্বামী কৃষি কাজ করে। তা দিয়ে কোনভাবে ডাল-ভাত খেয়ে জীবন পার করছি। জমি কিনে ঘর করার মতো কোন অর্থ নেই। এখন যেখানে আছি, এ জায়গাও নদীতে ভেঙে যাবে। তখন অন্যকোন জায়গা বেচে নিতে হবে। এ পর্যন্ত তেমন কোন সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পাইনি। সরকার ঘর দিতেছে শুনেছি, কিন্তু আমাদের জন্য কেউ কোন ঘরের ব্যবস্থা করেনি। একটা ঘর পেলে মেয়ে দুটাকে নিয়ে বাকি জীবন পার করতে পারতাম।
বেলাল হোসেন ও শাহ আলম নামে স্থানীয় দুই জেলে বলেন, বিগত ৫ বছর থেকে তাদেরকে এ ছোট ঘরে কষ্ট করে বসবাস করতে দেখে আসছি। স্থায়ীভাবে তাদের বসবাসের কোন জায়গা নেই।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারটি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ভূমিহীন সনদ এনে সরকারি ঘরের জন্য আবেদন করলে ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২
এনএইচআর