ঢাকা: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে আনতে সফিকুল হক চৌধুরী যে কাজ করেছেন তা জাতির গর্বের বিষয়। তিনি একইসঙ্গে সহজ-সরল ও ভিন্নধর্মী ব্যক্তি ছিলেন।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে তিনি এসব কথা বলেন। সফিকুল হক চৌধুরী স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভার আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন ফর স্যোশাল অ্যাডভান্সমেন্ট (আশা)।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, গতানুগতিক ব্যবসায়ী না হয়ে তিনি সব সময় ভিন্নধর্মী প্রতিষ্ঠান করতেন। তার কাজ বেঁচে থাকবে। তিনি এক জীবনে এতগুলো মানুষের জীবনে ইতিবাচক যে পরিবর্তন করে গেছেন, তা বিশাল ব্যাপার। সরকার এ কাজকে সম্মান দেয়, স্বীকৃতি দেয়।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও আশার জ্যেষ্ঠ পরামর্শক এম আবদুল আজিজ বলেন, সফিকুল হক চৌধুরী অত্যন্ত অঙ্গীকারবদ্ধ একজন মানুষ ছিলেন। এ অর্থবছরে করোনার অভিঘাত স্বত্ত্বেও ৭০ লাখ মানুষের মধ্যে ৩৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে আশা। সফিকুল হক চৌধুরীর সাহসী নেতৃত্বের কারণেই সহজিয়া মডেলের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হচ্ছে। এ স্মারকগ্রন্থ আগামী প্রজন্মের জন্য পথনির্দেশক হবে।
সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সফিকুল হক চৌধুরীর সঙ্গে আমার ভাই-বন্ধুর সম্পর্ক ছিল। তিনি অত্যন্ত হৃদয়বান মানুষ ছিলেন। কোনো ঋণ গ্রহীতারা মারা গেলে তিনি সে ঋণ মওকুফ করতেন। এমনকি তাদের শেষকৃত্য বা জানাজার ব্যবস্থাও তিনি করতেন। আশার মাধ্যমে দেশের টাকা দিয়ে দেশের মানুষের উপকার করেছেন। দেশদরদী ও দেশপ্রেমী এ ব্যক্তির আদর্শ ও অবদান অক্ষুণ্ন থাকবে।
সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সফিকুল হক চৌধুরী অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে কথা বলতেন, যে কোনো মানুষই তা বুঝতে পারতো। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে তার অবদান অনেক।
সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, শুরু থেকে আশা জাগানিয়া একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আশাকে গড়ে তুলেছিলেন সফিকুল হক চৌধুরী। আমরা সব ক্ষেত্রেই নিয়মনীতি কঠিন করার চেষ্টা করি। সেখানে তিনি ব্যতিক্রম ছিলেন, ভিন্নমাত্রার সংগঠক। তিনি আশার নিয়মনীতি সহজ করে ক্ষুদ্রঋণ দিতেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কাছে সহজে অর্থ পৌঁছে দেওয়া।
তিনি বলেন, দেশে গ্রামীণ অর্থনীতি এখনো খুবই চাঙ্গা। কম খরচে উন্নয়ন বা উদ্যোগ পরিচালনা করা যে সম্ভব সে উদাহরণ আশা দেখিয়েছে। সে উদ্যোগের সুফল করোনাকালেও দেখা যাচ্ছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, গ্রামীণ অর্থনীতির অভাবনীয় বিকাশই নানা সংকটে টিকে থাকার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে।
১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে যার একটা সিংহভাগ আশাসহ বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে।
সভায় এক ভিডিও বার্তায় ব্রিটিশ ক্ষুদ্রঋণ অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ স্টুয়ার্ট রাদারফোর্ড বলেন, এক বছর আগে আমরা সফিকুল হক চৌধুরীকে হারিয়েছি। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তার মডেল, নতুন কিছু করার আগ্রহ এবং তার অনুপস্থিতি স্বত্ত্বেও আশা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, আশার প্রেসিডেন্ট আরিফুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২
এমএমআই/আরআইএস