ঢাকা: রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নাম প্রস্তাবের সময় সাহসী, নির্লোভ ও বিতর্কমমুক্ত ব্যক্তিদের বিবেচনায় নেওয়ার জন্য অভিমত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট কনফারেন্স রুমে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তারা।
একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, আমরা বলেছি যে, বিভক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একেবারে ঐকমত্য তৈরি করা মুশকিল। সমাজের একটি অংশ যখন এই প্রক্রিয়ার বাইরে, তখন আপনাদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব যাতে সাধারণ গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা তালিকা প্রকাশ করতে পারেন। কেননা একটি দল যারা বর্জন করছে তারা তো বিরোধিতা করবে। এ অবস্থায় আপনারা আরও বেশি সতর্ক হবেন, যাতে একটি মানুষ নিয়েও যেন বিতর্ক না থাকে। আর আপনারা যাদেরকে নির্বাচিত করবেন, কয়দিন আগেই তাদের নামটা মিড়িয়ায় দেওয়ার জন্য। কেননা মিড়িয়া যদি তাদের নামটা জানতে পারে, তাহলে তাদের সম্পর্কে গণমানুষের কোনো অভিযোগ থাকে কিংবা কোনো অতীত থাকে, যেটা পরে নির্বাচিত হয়ে গেলে একটা কেলেঙ্কারির কারণ হয়। তারা এ ব্যাপারটি বিবেচনা করবেন বলেছেন।
সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, আমরা প্রথম যে জিনিসটি চেয়েছি আইনের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। এই সার্চ কমিটির সব সদস্য সম্মানিত এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে। আমরা চেয়েছি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নাম যাবে একটা সাংবিধানিক বাধ্যকতা রয়েছে উনি এই ১০ জনের নামের বাইরে যেতে পারবেন না। এর মধ্যে থেকে যেকোনো পাঁচজনকে নিযুক্ত করবেন। কিন্তু সারা বাংলাদেশে যে যোগ্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করা দায়িত্ব তাদের। অবশ্যই তারা যেন যোগ্যতা সম্পন্ন হয়, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হয় এবং তাদের লাইফে যেন কোনো ধরনের ক্রেডিবিলিটি গ্যাপ না থাকে। যাচাই- বাছাই করে তাদের নাম যেন রাষ্ট্রপিতির কাছে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত যাদের নাম আসছে তাদের নাম যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে তারা যে ১০ জনের নাম সুপারিশ করবে, সেগুলোও যেন গণমাধ্যমে আসে।
যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, আলোচনায় আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি। সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নাম দেবে, সে ১০ জন কর্মে ও যোগ্যতায়, পাশাপাশি তারা যেন সাহসী হোন এবং নির্লোভ ব্যক্তি হোন। আমরা বলেছি যাতে অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গায় আছেন—এমন ১০ জনের নাম দেওয়া হোক। এমন কিছু করা না হোক, যাতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর সেখানে আমরা নির্বাচন বিষয়ের বাইরে অন্য বিষয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখি। যেমনি আমাদের নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্বাসে ঘুণ ধরেছে, সে জায়গাটা যেন আর ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি আগামী নির্বাচন জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সে নির্বাচনে আমরা চাই এমন নির্বাচন কমিশন হোক, সে নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী, আইনের বিধান অনুযায়ী কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, সেখানে সাহসী মানুষ দরকার। সাহস পোশাকের বিরুদ্ধে, সাহস পেশিশক্তির বিরুদ্ধে, সাহস অস্ত্রের বিরুদ্ধে, কোনো গোষ্ঠী বা দলের বিরুদ্ধে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে এমন মানুষ প্রয়োজন। এমন মানুষ প্রয়োজন যিনি নির্লোভ থাকবে। ভবিষ্যতে আবার কোনো পদে যাব এমন লোভ যার থাকবে না। এসব বিবেচনা করে অন্তত অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গা তৈরি করার জন্য একটা নির্বাচন কমিশন দরকার। যারা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়।
ভোরের কাগজের শ্যামল দত্ত বলেন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম বলিনি। কিন্তু এটা বলেছি, এ নির্বাচন কমিশনের ওপর অত্যন্ত গুরুদায়িত্ব এ কারণে, কারণ বিগত নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে নানা বিতর্ক ছিল। আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে নির্বাচনটি করতে হলে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দরকার। যেকোনো নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হয় সংখ্যালঘুরা। এই নির্বাচন কমিশনে কোনোকালে সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এদের প্রতিনিধিত্ব ছিল না। আমরা বলেছি গণমাধ্যম থেকে প্রতিনিধিত্ব নিতে। সিভিল সোসাইটিতে ভালো ভূমিকা আছে তাদেরকে নিতে। প্রস্তাবে এমন নাম থাকা উচিত, যারা আগামীতে আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যতসব নাম আসছে সেগুলো প্রকাশ করুন। আমরা দুই-একজনের নাম প্রস্তাব করেছি। আমরা আগে পাঁচটা নাম দিয়েছিলাম। সাখাওয়াত প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আর্মির চিফ ইকবাল করিম ভূইয়া, আমাদের প্রথম মহিলা বিচারপতি নাজমুন আরা, বদিউল আলম মজুমদার এবং সুলতানা কামাল। তাছাড়া আমি বলেছি, যেহেতু ১০টি নাম সেকারণে আমি আরও তিনটা নাম বিবেচনায় নিতে বলেছি। একজন হল প্রাক্তন আইন সচিব কাজী হাবিুবুর আউয়াল। উনি খুব সাহসীভাবে আর্মির একটা …ধরেছিলেন। এজন্য আমি মনে করি যে উনি একজন সাহসী মানুষ। তাছাড়া আরও দুজনের নাম আমি প্রস্তাব করেছি।
তিনি বলেন, যদিও বিএনপি আর কিছু রাজনৈতিক দল আসছে না, তাদের আবারও চেষ্টা করার জন্য। আমার মতে তাদের সরকার পতনের আন্দোলন সেটা তারা করতেই থাকুক। তাহলেও তো একটা নির্বাচন লাগবে। নির্বাচন কমিশনে যদি ভালো সাহসী লোক না যায়, কেবল সরকার পরিবর্তন হলে হবে না। আপনারা পুনরায় চেষ্টা করে দেখেন আলোচনা করা যায় কি না। সরকার পবির্তন হলো কিন্তু ভালো ইলেকশন কমিশন হলো না, তাহলেও কিন্তু হবে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সৎ যোগ্যতাসম্পন্ন গুণগুলো তারা যেন বাছাইয়ের সময়ে গুরুত্ব দেয়। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন হয়, সে ধরনের নাম যেন তারা প্রস্তাব করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২
এসকেবি/জেএইচটি