ঢাকা: লাশঘরে তালাবদ্ধ বাবার মরদেহ। সেই মরদেহ পাহারা দিচ্ছেন ছেলে জাহিদ বেপারী।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালের দিকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যম তাজপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে গাছ থেকে পড়ে শহিদুল বেপারী (৭৭) আহত হন। পরে তাকে স্বজনরা উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মারা যান তিনি। পরে হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী তার মরদেহ জরুরি বিভাগের লাশঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।
বাবার মরদেহ লাশঘরে তালাবদ্ধ করে কেন রাখা হয়েছে সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার ছোট ছেলে অটোচালক জাহিদ ব্যাপারী। একা একা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তালাবদ্ধ লাশঘরের সামনে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে।
তার সঙ্গে কথা হলে দু’চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে তিনি বলেন, বাবা গাছ থেকে পড়ে মারা গেছেন। বাবাকে কেন লাশঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হবে। তাই লাশঘরের সামনে পাহারা দিচ্ছি। কেউ যেন আমার বাবার সঙ্গে কিছু করতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে বাবা আমাকে বলল মন দিয়ে কাজ করো বাবা, কিস্তি শোধ করতে হবে। তাহলে আজ বাবাকে কেন লাশঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হলো।
বৃদ্ধ বাবাকে এভাবে হারিয়ে অনেক আবেগজনিত কথা বলতে থাকেন জাহিদ। কিছুতেই তিনি লাশঘরের সামনে থেকে উঠতে চাইছেন না। যতক্ষণ না পর্যন্ত তার বাবার মরদেহ বাড়িতে না নিয়ে যাবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ওখানেই বসে থাকবেন স্বজনদের সেই কথা বলতে থাকেন।
মৃত ব্যক্তির দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে সুমন বেপারী কালীগঞ্জে একটি প্রতিষ্ঠানে কাটিং মাস্টার হিসেবে চাকরি করেন। মেঝ মেয়ে বিথি বিবাহিত ও ছোট ছেলে জাহিদ অটোচালক।
মৃত ব্যক্তির এক আত্মীয় জানান, তাদের অন্যান্য স্বজনরা থানায় গেছে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য। কারণ চিকিৎসকরা ডেট সার্টিফিকেট পুলিশের শরণাপন্ন হয়ে মরদেহ নিতে হবে এ রকম নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বজনরা থানায় যোগাযোগ করছে।
এদিকে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া জানান, যেকোনো মরদেহ হাসপাতালে থেকে নিতে হলে নিয়ম-কানুন আছে। এজন্যই মরদেহ জরুরি বিভাগের লাশঘরে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২
এজেডএস/আরবি