চাঁদপুর: মেঘনা নদীর চাঁদপুর নৌ সীমানায় কোনো চ্যানেল নির্দিষ্ট না থাকায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ও লাইটার জাহাজ চলাচলে প্রতিদিনই জেলেদের মূল্যবান জালগুলো কাটা পড়ছে। যে কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন জেলেরা।
দেড় থেকে দুই লাখ টাকার একেকটি জাল কাটা পড়লে পরদিন মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায় জেলেদের। লাইটারের লোকদের মৌখিক কিংবা ইশারা দিয়ে জালের ওপর দিয়ে না গিয়ে চ্যানেল পরিবর্তন করার অনুরোধ করা হলেও তারা মানছেন না। জাল কাটা প্রতিরোধে নৌপথের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জেলেরা।
সম্প্রতি চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের মেঘনা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন জেলে জাহাজে কাটা পড়া জাল মেরামত করছেন। জাল কাটা পড়ায় তারা নদীতে মাছ আহরণে নামতে পারেননি।
জেলে নৌকার মালিক বাসানি মিজি বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে প্রতিদিনই জেলেদের জাল কাটা পড়ছে। আমরা অনেক সময় জাহাজের লোকদের অনুরোধ করি একটু ঘুরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা অনুরোধ রাখেন না। যার কারণে আমাদের মূল্যবান জালগুলো কাটা পড়ে।
একই এলাকার জেলে আবু তাহের, দেলোয়ার হোসেন গাজী ও শাহ্ আলম বাংলানিউজকে বলেন, বড় বড় নৌযান ও জাহাজে জাল কেটে যাওয়া দীর্ঘদিনের সমস্যা। এত বড় নদী কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট নৌ চ্যানেল নাই। যার কারণে জাহাজগুলো ইচ্ছামতো চলে। আমাদের অনুরোধ তারা রক্ষা করেন না। আমাদের একটি জাল তৈরি করতে অনেক টাকা খরচ হয়। যার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন জেলেরা। নৌপথের দায়িত্বরত কোস্টগার্ড বা নৌ পুলিশ সদস্যরা যদি এ বিষয়ে একটু মানবিক হন, তাহলে আমাদের জালগুলো কম কাটা পড়বে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জাহাজে জেলেদের জাল কাটা পড়ে, এটি আমরাও জানি। বিষয়টি অবশ্যই দুঃখজনক। কিন্তু জাহাজ চলাচলের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। তারা সে নিয়মের মধ্যে চলে। জেলেরাও অনেক সময় দীর্ঘ জাল পেতে রাখায় নৌযান এর ওপর দিয়ে চলে এবং তখনই কাটা পড়ে।
চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা একেএম কায়সারুল ইসলাম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে অবশ্যই নির্ধারিত চ্যানেল আছে। নৌ চ্যানেল সংরক্ষণ করাই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাজ। নদীর যেখানে নৌযান চলাচলে বিপদ হবে, সেখানে আমাদের মার্কিং করে দেওয়া আছে। আমাদের নৌযান সংরক্ষণ বিভাগ এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে।
নৌযান সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ চাঁদপুরের যুগ্ম পরিচালক মাহমুদুল হাসান থান্ডার্ড বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে আমি নৌযান সংরক্ষণ বিভাগে কাজ করছি। যার কারণে আমার সঙ্গে জেলেদের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এসব বিষয়ে আমি অবগত। আইন বলছে, নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। নদী নিরাপদ সংরক্ষণ রাখাই আমাদের কাজ। সেদিক থেকে যেখানে সেখানে জাল পেতে জেলেরাই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। তবে আমরা জেলেদের বিষয়ে সব সময়ই সহনশীল। বিগত দিনে আমি নৌযান ফেডারেশনগুলোতে বলেছি, জেলেদের জালগুলো যেন কাটা না পড়ে। সে বিষয়ে একটু মানবিক হতে বলেছি। প্রয়োজনে তাদের আবার বলা হবে।
তিনি বলেন, আমি জেলেদের বলেছি, যেদিক দিয়ে জাহাজ চলে, সেদিক দিয়ে জাল পাতার দরকার নেই। কিন্তু তারা বলছেন, নদীর গভীর এলাকায় মাছ বেশি পাওয়া যায়। যার কারণে হাজার হাজার জেলে স্রোত ও গভীর এলাকায় মাছ ধরেন। তখন তারা কীভাবে জেলেদের ইশারা কিংবা ইঙ্গিত রক্ষা করবেন? কারণ একটির পর একটি জাহাজ আসতে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
এসআই