রাজশাহী: শীত মৌসুমে রাজশাহীর খেজুরে গুড়ের বিশেষ কদর রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই। কিন্তু কি দিয়ে তৈরি হয় এ খেজুরের গুড়? আর এ গুড়ে কি খেজুরের রস থাকে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে না বলে অভিযোগ আসছিল পুলিশের কাছে।
তাই খাঁটি খেজুরের গুড় তৈরি পেছনের নেপথ্য কাহিনী জানতে মাঠে নেমেছিল রাজশাহী জেলা পুলিশ। আর এতে সত্যতাও মিলেছে।
দেখা গেছে চিনি, হাইড্রোজ, রাসায়নিক উপাদান, চুন, ফিটকারি ও ডালডা দিয়েই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল গুড় তৈরি করে আসছেন। খেজুরের গুড় তৈরিতে স্বাস্থ্যসম্মত কোনো উপাদান ব্যবহার হয় না!
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী থেকে এমন ৫০ মণ ভেজাল খেজুরের গুড় জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী চকরপাড়ায় এ অভিযান পরিচালনা করে জেলা ডিবি পুলিশ।
পরে সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করেন রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন। এ সময় গ্রেফতার সাতজনকে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করা হয়।
গ্রেফতার সাতজন হলেন- ভেজাল গুড় কারখানার মালিক রকিব আলী (৪২), তার সহযোগী সুমন আলী (৪২), অনিক আলী ওরফে পাইলট (৩০), মাসুদ রানা (৩০), বিপ্লব হোসেন ওরফে সাজু (২৫), মামুন আলী (২৭), বাবু (২৫)। তাদের সবার বাড়িই বাঘা উপজেলার আড়ানী চকরপাড়া গ্রামে। সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ হোসেন জানান, এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা অভিযোগ পাচ্ছিলো, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানীতে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরি করে রাজশাহী ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে আসছে। এ ঘটনায় রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার আড়ানীর চকরপাড়া গ্রামের রকিব আলীর কারখানায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে ৫০ মণ ভেজাল খেজুরের গুড় জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ১০ বস্তা চিনি, এক বস্তা ফিটকিরি, এক বস্তা চুন, ডালডা ও হাইড্রোজসহ ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এ সময় রকিব আলীসহ তার সাত সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে জেলা ডিবি পুলিশ।
গ্রেফতার রকিব জানিয়েছেন, গত তিন থেকে চার মাস ধরে তারা চিনি, হাইড্রোজ, রাসায়নিক উপাদান, চুন, ফিটকারি ও ডালডা দিয়ে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরি করে আসছেন। এখানে খেজুরের গুড় তৈরির স্বাস্থ্যসম্মত কোনো উপাদানই ব্যবহার করা হয় না। বাঘার আড়ানীর খেজুরের গুড়ের চাহিদা রয়েছে সারাদেশেই, এ সুযোগেই তারা ভেজাল গুড় তৈরি করে সরবরাহ করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. ইফতে খায়ের আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) অলক বিশ্বাস, সহকারী পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) রুবেল আহমেদ ও সহকারী পুলিশ সুপার (এসএএফ) নিয়াজ মেহেদী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
এসএস/আরআইএস