লক্ষ্মীপুর: অভাব-অনটনের সংসারে কিছুটা সহযোগিতা করতে ১৪ বছর বয়সে উপার্জনে নামে মো. ইয়াছিন। অটোরিকশা চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার চেষ্টা ছিল তার।
ইয়াছিনের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরভুতা গ্রামে। তার বাবা ইব্রাহিম তাদের কোনো খোঁজ-খবর রাখে না।
অস্বচ্ছলতা মেটাতে অটোরিকশায় জীবিকা নির্বাহ করা সেই কিশোর ইয়াছিনের পরিবার এখন সম্পূর্ণ ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে কিশোর বয়সে তাকে যেন শারীরিক পরিশ্রম করতে না হয়- সে জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালু করতে আর্থিক সহযোগিতাও পেয়েছে তার পরিবার। এর আগে নতুন একটি অটোরিকশাও উপহার পেয়েছে পরিবারটি। উপজেলা প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের পলোয়ান মসজিদ এলাকা থেকে কিশোর ইয়াছিনের অটোরিকশা চুরি হওয়ার পর সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার কান্নার চিত্র ধারণ করে ওইদিন সর্বপ্রথম বাংলানিউজে একটি মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর পরপরই বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বিভিন্ন সংস্থা থেকে তার পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া পুলিশ এবং র্যাবের পক্ষ থেকে তার অটোরিকশা উদ্ধার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরভুতা গ্রামে ইয়াছিনের বাড়িতে যায় ভরসা গ্রুপ নামীয় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ও জেলা পুলিশ।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আক্তারুল হকের পক্ষে রফিকুল ইসলাম ওই বাড়িতে গিয়ে ইয়াছিনের মায়ের হাতে এক লাখ টাকা তুলে দেন। এছাড়া স্থানীয় একটি এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের ৩৬ হাজার টাকা পরিশোধ করে ভরসা গ্রুপ।
এসময় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ, সদর সার্কেল মিমতানুর রহমান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম উদ্দীন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম পাবেল, সাংবাদিক সোহেল রানা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোতাহার উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, একটি অসহায় পরিবার ও কিশোরের অটোরিকশা চুরি হওয়ার খবর পজিটিভ সাংবাদিকতার নিদর্শন। চুরি হওয়া অটোরিকশা উদ্ধারে ও ভুক্তভোগী পরিবারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছে পুলিশ।
এদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে তার পরিবারকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (মিশুক) কিনে উপহার দেয় ঢাকার বেসরকারি সংস্থা 'প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটি (পিফরএইচ)'।
স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে রিকশাটি ইয়াছিনের মা ফেন্সী আক্তারের কাছে হন্তান্তর করা হয়। এসময় রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার্স ক্লাব' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়াছিনের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করে।
ইয়াছিনের মা ফেন্সী আক্তার বলেন, তার তিন মেয়ে ও দুই ছেলে ছিল। ছোট ছেলে ৯ মাস আগে ব্রেন ক্যানসারে মারা যায়। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের ঋণ করতে হয়েছে। তার স্বামী ইব্রাহিম অন্যত্র বিয়ে করে চলে যায়। দুই বছর থেকে পরিবারের কোনো খোঁজ রাখেন না তিনি। বাড়িতে যে জমিটুকু ছিল সেগুলো বিক্রি করে দেবরের জমিতে ঘর তৈরি করে থাকেন তারা। অভাবের সংসারে বাধ্য হয়ে তার ছেলে ইয়াছিন অটোরিকশা চালানো শুরু করে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি যাত্রীবেশী দুই চোর তার অটোরিকশাটি কৌশলে চুরি করে নিয়ে যায়।
** অটোরিকশা উপহার পেল সেই ইয়াছিনের পরিবার
** মুহূর্তেই উধাও অটোরিকশা, কান্নায় ভেঙে পড়লো কিশোর চালক
বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
আরএ