ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বাবলম্বী হয়ে উপহারের ঘর ফিরিয়ে দিলেন জমির

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
স্বাবলম্বী হয়ে উপহারের ঘর ফিরিয়ে দিলেন জমির স্ত্রী, সন্তানসহ জমির উদ্দীন

চুয়াডাঙ্গা: মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ভূমিহীনদের ঘর ও জমি দেওয়া হয়। ভূমিহীন হওয়ায় সেই ঘর পেয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার জমির উদ্দীন।

কিন্তু এখন স্বাবলম্বী হওয়ায় সেই জমিসহ সেই ঘর ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। এলাকার অন্য দরিদ্র-অসহায় মানুষকে দেওয়ার জন্য সেই ঘর ও জমির দলিল বুঝিয়ে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কাছে।

উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের মৃত খোদা বক্সের ছেলে জমির উদ্দিন বিশ্বাস (২৮)। এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার পরিবার। জানান, পেশায় তিনি ছিলেন একজন দিনমজুর। সারাদিনের উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোনো রকমে চলছিল সংসার। তবে ভূমিহীন হওয়ায় ঠাঁই হয় মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া শাহপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এতে কিছুটা আর্থিক কষ্ট লাঘব হয়। মাথা গোজার ঠাঁই হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে কলা কিনে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে প্রতিদিন আয় করছেন ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এভাবে প্রতিমাসে আয় হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ফলে পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন ভালোই আছেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহপুর গ্রামে ভূমিহীন পরিবারগুলোর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে একটি আদর্শ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেওয়া ঘর পেয়েছেন ভূমিহীনরা।   প্রকল্পে রয়েছে শিশুদের জন্য উন্মুক্ত খেলার মাঠ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে ফলজ ও বনজ গাছ, বসত ভিটায় সবজি চাষ। বাড়তি আয়ের জন্য গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগী পালন করছেন সুবিধাভোগীরা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশের সঙ্গে জীবননগর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৮টি ঘর উদ্বোধন করেন। ভূমিহীন দিনমজুর জমির উদ্দিন আন্দলবাড়িয়া আশ্রয় প্রকল্পে উপহারের বাড়িতে বসবাস করতেন। তিনি এখন স্বাবলম্বী। তাই স্ত্রী আফরোজা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের বসত ঘর ও জমির দলিল জমা দেন জমির উদ্দীন।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার সময় জীবননগরের ইউএনও আরিফুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবির, আন্দুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার জমির উদ্দিনের বাড়িতে হাজির হন এবং তার সঙ্গে কথা বলেন। ঘর ও জমি ফিরিয়ে দেওয়ার পর জমির উদ্দিন বলেন, এক সময় আমার কিছুই ছিল না। নিজের মাথা গোঁজারও ঠাই ছিল না। ছিল না এক শতকও জমি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মাথা গোঁজার জন্য ঘর ও জমি দিয়েছিলেন। সেখানে থেকেই আমি কলার ব্যবসা শুরু করি।

ইউএনওসহ প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন ঘর-জমি

তিনি বলেন, বর্তমানে আমি স্বাবলম্বী। এখন নিজের আয় করা টাকায় জমি কিনে ঘর তৈরি করেছি। আমার তো এখন নিজের মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে। সমাজে আমি ছাড়া এখনও অনেক দরিদ্র, ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তি আছে; এই ঘরটা আমি তাদের দিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, তাই আমি স্বাবলম্বী। আমি নিজের টাকায় জমি ও ঘর তৈরি করে ফেলেছি। এখন এই ঘর ও জমি আমার আর প্রয়োজন নেই। তাই আমি চাই এই ঘরটা অন্য কোন দরিদ্র মানুষ পাক।

আশ্রয়ন প্রকল্পের অন্যান্য বাসিন্দারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্রয়স্থল দিয়েছেন। আগে আমাদের খুব খারাপ দিন গেছে। এখন আমাদের থাকার জায়গা হয়েছে, সেই সঙ্গে সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য আয়ের সুযোগও হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

ইউএনও আরিফুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্ন, দেশে যাতে কেউ গৃহহীন না থাকেন সে জন্য তিনি ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তিদের জমি এবং ঘর প্রদান করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় জীবননগর উপজেলার শাহপুর গ্রামের দিনমজুর জমির উদ্দিনকে একটি ঘর দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘরে বসবাস করে নিজে পরিশ্রম করে আজ তিনি স্বাবলম্বী। বর্তমানে তিনি অন্যত্র কিনে ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। এ কারণে অন্য কোনো ভূমি ও গৃহহীন ব্যক্তিকে দেওয়ার জন্য নিজে লিখিত ভাবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া জমি ও ঘর প্রমাসনের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

বাংলাদেশ সময়:  ১১১৪ ঘণ্টা, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।