কক্সবাজার: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল গ্রামের ‘দাঙ্গার বিল’। বিশাল এ বিলের কিছু জমির মালিকানা নিয়ে এক সময় দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই থাকতো।
তবে গত এক বছরে এই বিল থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। এ বিল ও আশপাশের সরকারি বনভূমিতে স্কেভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) ও শ্যালোমেশিন বসিয়ে মাটি ও বালু লুট করায় বিশাল এলাকা পুকুরে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে এই পরিবেশ বিধ্বংসী অপতৎপরতার কারণে এক পাশে সাফারি পার্ক, পাহাড়ি টিলাসহ গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে হেলে পড়েছে পার্কের নিরাপত্তা দেওয়াল। এছাড়া যে কোনো মূহুর্তে আশপাশের টিলা সেখানে ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী মোহাম্মদ সজিব,সাইফুল এহেসান, মিনহাজ উদ্দিন জিকু,মাইনুল এহেসান চৌধুরী, রেজাউল ওরফে সোনা মিয়া,নেজাম উদ্দিন,বদিউল আলম, জিয়াউল করিম, নজরুল কোম্পানি,আবদুল হামিদ,আরমানুল হক চৌধুরীসহ ৫০ জনের একটি সিন্ডিকেট রাতদিন এখান থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন এসব বন্ধে অভিযান চালালেও পরবর্তীতে আবারও শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাঙ্গারবিলে স্থানীয় রেজাউল করিম চৌধুরীদের জমি রয়েছে প্রায় ২০ একর মতো। তিনি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে মাটি ও বালু লুটের অভিযোগ করে আসছেন।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিকে দিতে আমি ক্লান্ত। জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। হয়তো প্রশাসনও সেখানে অসহায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে পূর্ব দিকে গেলেই উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলার রংমহল গ্রাম। এ গ্রামের হিন্দু পাড়ার উত্তরে দাঙ্গার বিল। এ বিলের উত্তর দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। পশ্চিম পাশে ধানের জমি ও বাড়ি ঘর। পূর্ব পাশেও খাল, পাহাড় ও জমি। এর মাঝখানের বিশাল বিল জুড়ে চলছে মাটি ও বালু লুটের ঘটনা।
সরজমিনে দেখা যায়, রংমহল হিন্দু পাড়া থেকে বিলে ঢুকতে একটি তল্লাশিচৌকিও বসানো হয়েছে। ৩০ মিনিটে তল্লাশিচৌকি পার করে ২৫টি ডাম্প ট্রাক ও মিনি ট্রাক ঢুকেছে। আশপাশের পাড়া ও রাস্তায় মজুদ করে রাখা হয়েছে কাঁদা বালুর স্তূপ। সেখান থেকেই বালু ২২ টনের বড় ট্রাক ভর্তি করা হচ্ছে।
অভিযুক্তদের একজন মোহাম্মদ সজিব জানান, জমির মালিকদের খাজনা দিয়ে বালু ও মাটি কাটা হচ্ছে।
বালু তোলার কোনো অনুমোদন আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা দিচ্ছে। আমরা আইনিভাবে মোকাবিলা করব।
সম্প্রতি বালু ও মাটি লুট বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি(ইয়েস) পরিবেশ,বন ও জলবায়ু এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব,প্রধান বন সংরক্ষক,পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ ১৩ কর্মকর্তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহীম খলীল মামুন বলেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করছে তারা। কিন্তু এসব বন্ধে প্রশাসনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, পার্কের নিরাপত্তা দেওয়ালের পাশ থেকে বালু ও মাটি কেটে ফেলায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
ডুলাহাজারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর জানান, জেলা প্রশাসন থেকে যেসব খাল ইজারা নেওয়া হচ্ছে, সেখানে মূলত বালু নেই। এই ইজারার কাগজ নিয়ে বনভূমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে বালু ও মাটি কাটা হচ্ছে। এতে পাহাড়ি এ জনপদে পরিবেশ- প্রতিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিগগিরই লিখিতভাবে জানানো হবে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের বালু মহাল ইজারার তথ্যে জানা গেছে, ডুলাহাজারা-২ বালুমহালটি শর্ত সাপেক্ষে ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইজারাদারের বালুমহালের সীমানা বগাচতর মৌজার ছড়ায় ৮ দশমিক ৬ একর এলাকা হলেও প্রায় ছড়ার আশপাশের অন্তত ১০০ একর ফসলি জমি ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জায়গা থেকে বালু-মাটি তোলা হচ্ছে।
বালু মহালটি ইজারা নিয়েছেন মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. কাউছার উদ্দিন কছির।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
এনএইচআর