ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভার্চ্যুয়াল মেডিক্যাল স্ক্যানিংয়ের ফাঁদ পেতে শতাধিক নারীর সর্বনাশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
ভার্চ্যুয়াল মেডিক্যাল স্ক্যানিংয়ের ফাঁদ পেতে শতাধিক নারীর সর্বনাশ

ঢাকা: চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক নারীকে ভার্চ্যুয়াল মেডিক্যাল স্ক্যানিংয়ের নামে গোপন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ফাহাদ (১৯) নামের এক যুবক।

অ্যাপের মাধ্যমে ভয়েস পরিবর্তন করে নিজেই মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে ভিকটিমদের ভার্চ্যুয়াল মেডিক্যাল স্ক্যানিংয়ের নামে ভিডিও করতেন।

এছাড়াও গুগল ও উইকিপিডিয়াতে টাইপিস্টের চাকরির কথা বলে প্রলোভন দেখাতেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এরআগে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর গুলশানের নৰ্দ্দা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি ক্যামেরা, দু’টি লেন্স, একটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিমকার্ড, একটি এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ও ৪০৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, করোনা মহামারীর শুরু থেকেই অপরাধীরা ভার্চ্যুয়াল জগতের অপব্যবহার করে বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করছে। প্রতারকরা বিভিন্নভাবে নারীদের হেনস্তা, প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলছে। ভুক্তভোগী অনেকে ‘রিপোর্ট টু র‍্যাব’ ও র‍্যাবের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানায়। এছাড়া অনেকে র‍্যাবের কাছে সরাসরি অভিযোগ দেন। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের ধরতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতরাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নৰ্দ্দা এলাকায় অভিযান চালায়। পরবর্তীতে ‘ভার্চ্যুয়াল মেডিক্যাল স্ক্যানিং’-এর নামে গোপন ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অপরাধে আল ফাহাদকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাহাদ জানিয়েছে, অসংখ্য নারীকে প্রতারণার মাধ্যমে অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ব্লাকমেইলিংয়ের কৌশল উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রথমে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে অল্প বয়সী, ১০ শ্রেণী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারীদেরকে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক সংস্থায় যেমন গুগল-উইকিপিডিয়াতে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাত। এসময় চাকরিপ্রত্যাশী অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তাদের (চাকরিপ্রার্থী) প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে তিনশ থেকে ৫০০ টাকা ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ নেওয়া হতো। এভাবে অনেক চাকরিপ্রত্যাশীকে আকৃষ্ট করত।

অন্যদিকে মোবাইলে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে নারীকণ্ঠে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। এছাড়া বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থীদের করোনাকালীন সময়ে ‘ভার্চ্যুয়াল মেডিক্যাল’ করা হবে বলে জানানো হতো। প্রার্থীদের (নারীদের) বিভিন্ন সামাজিক চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে ভিডিও কলে যুক্ত করত।

এসময় নিজের মোবাইলের ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভিডিওকলে মেডিক্যাল পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমদের গোপন ভিডিও ধারণ করত। পরবর্তীতে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হত। এভাবে অভিযুক্ত ফাহাদ শতাধিক নারীকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।

চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যাশীদের অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হতো। ফাহাদ নিজেই বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে নারীকন্ঠে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে ‘ভুয়া নিয়োগ’ প্রক্রিয়া শেষ করত।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন নারীর নাম ব্যবহার করে চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রথমে নিজেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিত। একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিতে যোগদান করেছে বলে জানাত। পরবর্তীতে নিজেই ওই কোম্পানির এডমিন অফিসার হিসেবে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিত এবং ভিকটিমদের ইন্টারভিউ নিতো। পুনরায় ওই অ্যাপস-এর মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে নিজেই মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে ভিকটিমদের ভার্চ্যুয়াল মেডিক্যাল করানোর নামে ভিডিও করত।

যেহেতু করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে গিয়ে মেডিক্যাল করা সহজ ছিল না, সেক্ষেত্রে ফাহাদ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও করে ভিকটিমদের ব্ল্যাকমেইল করত।

তিনি আরও বলেন, শতাধিক নারীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা করেছে ফাহাদ। যারা তার ফাঁদে পা দিয়েছে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হত। এভাবে দেড় বছর ধরে শতাধিক নারীকে গোপন ভিডিও দেখিয়ে প্রতিনিয়মিত ব্ল্যাকমেইলিং করত।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আসামি ফাহাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। সে একটি স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে তার বাবার সঙ্গে রেলস্টেশনের পাশে একটি ফলের দোকানে বসত। ফল বিক্রির আড়ালে ফেসবুকে 'Online Job BD' ও 'Part Time Jobs in Dhaka' এবং 'Part Time Jobs in Bangladesh' নামে গ্রুপে সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। পরবর্তীতে গ্রুপে দেশি-বিদেশি কোম্পানিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে চাকরি দেওয়ার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করছিল। প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে ফেসবুকে বেশ কিছু নারীদের ভুয়া আইডি ব্যবহার করত।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
এমএমআই/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।