বরিশাল: বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সুরভী-৭ লঞ্চের যাত্রীরা নিরাপদে বরিশালে পৌঁছেছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ বরিশালের পরিদর্শক কবির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে নিরাপদে সুরভী-৭ লঞ্চের যাত্রীদের এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে করে বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছেছে।
এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের মাস্টার হুমায়ুন কবির জানান, তাদের লঞ্চটি বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের থ্রি অ্যাঙ্গেল সিপ ইয়ার্ডে মেরামতের জন্য নেওয়া হয়েছে। তবে লঞ্চের যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা পানির উপরিভাগে থাকায় বড়ধরনের কোনো ঝুঁকি ছিল না। তারপরও যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চ ঘটনাস্থলে এনে যাত্রীদের সেটিতে উঠিয়ে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ৩টার দিকে বরিশালের উদ্দেশে পাঠানো হয়।
তিনি জানান, এর আগে বুধবার রাত ৯টার দিকে ঢাকার সদরঘাট থেকে ৫৩৯ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা দেয় তাদের লঞ্চ এমভি সুরভী-৭। রাত প্রায় ১১টার দিকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া সংলগ্ন ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর সংযোগ স্থল অতিক্রমকালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাল্কহেড সুরভী লঞ্চকে ধাক্কা দেয়।
তিনি আরও জানান, বাল্কহেডটিতে কোনো ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন বা বাতি ছিল না। ফলে সেটি রাতে দূর থেকে দেখাও যায়নি। আর ওই বাল্কহেডটি অন্য একটি বাল্কহেডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চালছিল এবং হঠাৎ করে বাল্কহেডটি নৌপথে চলাচলের নির্ধারিত পাশ থেকে বিপরীত পাশ দিয়ে চলছিল।
লঞ্চের মাস্টার হুমায়ুন কবির জানান, বাল্কহেডের ধাক্কায় আমাদের লঞ্চের সামনের পানির ওপরের অংশ ফেটে যায় এবং ধাক্কার লাগার পরপরই বাল্কহেডটি ডুবে যায়। এ সময় আমরা লঞ্চ থেকে নদীতে বয়া ফেলে বাল্কহেডের আরোহীদের সহায়তাও করি।
তিনি বলেন, রাতে নৌপথের নিরাপত্তার স্বার্থে বাল্কহেড চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও নিয়মিত বাল্কহেড চলাচল করছে। এ ঘটনার সময় কাছাকাছি এমভি পারাবত-১৮ ও মানামী নামে দুটি লঞ্চ ছিল। যেগুলোও দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারতো।
এ ঘটনায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ মেরিন আদালতে মামলা দায়ের করবে বলে জানিয়েছেন মাস্টার হুমায়ুন কবির।
এদিকে বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছানো যাত্রীরা জানান, বাল্কহেডটির কোনো সাংকেতিক বাতি ছিল না। দ্রুত গতিতে চলা সুরভী-৭ এর সঙ্গে প্রথমে বাল্কহেডটির সংঘর্ষ হয়। বিষয়টি খেয়াল না করে মানামী লঞ্চ সুরভী লঞ্চকে ওভারটেক করতে গিয়ে মানামী লঞ্চের সঙ্গেও বাল্কহেডটির ধাক্কা লাগার উপক্রম হয়। মানামী লঞ্চের পাশে আরও একটি বাল্কহেড ছিল, সেটিও অল্পের রক্ষা পেয়েছে। দুইটি বাল্কহেডের মাঝখান দিয়ে দ্রুতগতিতে মানামী লঞ্চ বের হয়ে গেছে। আর সুরভী লঞ্চের পেছনে ছিল পারাবাত-১৮ লঞ্চ। অল্পের জন্য সুরভী লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লাগেনি পারাবাত লঞ্চের। মূলত মানামী, সুরভী ও পারাবাত লঞ্চ নদীতে প্রতিযোগিতা করে চলছিল। পুরো দোষ বাল্কহেডের থাকলেও এমন ভাবে লঞ্চ চালানো উচিত নয়।
যাত্রীরা আরও জানান, ধাক্কা লাগার পর সুরভী-৭ লঞ্চটি কিছুক্ষণ থামিয়ে রেখে আবার চালু করা হলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। পরে পুনরায় নদীর তীরে লঞ্চটি নোঙর করা হয়। পরে সেখানে পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা আসেন।
সুরভী-৭ লঞ্চের মালিক রিয়াজুল কবির জানান, অবৈধভাবে রাতে বাল্কহেড চালিয়ে লঞ্চকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। এতে লঞ্চের সামনের দিকের ওপরের অংশ ফেটে গেছে।
এদিকে কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জহিরুল হক বাংলানিউজকে জানান, বালুবাহী বাল্কহেডটি ঢাকার ডেমরার দিকে যাচ্ছিলো। লঞ্চের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এটি ছয়জন শ্রমিক নিয়ে ডুবে যায়। তাদের মধ্যে পাঁচজন শ্রমিককে জীবিত পাওয়া গেলেও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা নিখোঁজ শ্রমিককে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুন>>
>>> লঞ্চের ধাক্কায় বাল্কহেড ডুবি, সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ শ্রমিকের
>>> গজারিয়া নদীতে লঞ্চ ও বাল্কহেডের সংঘর্ষ
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
এমএস/আরআইএস