ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগে গঠিত সার্চ কমিটিতে কে কার নাম প্রস্তাব করেছেন, তা প্রকাশের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একই সঙ্গে সংগঠনটি প্রাথমিক তালিকা থেকে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারীসহ ২০-৩০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে তা প্রকাশ করার দাবিও জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দাবিগুলোর কথা জানিয়েছেন সুজন কর্মকর্তা মর্জি বিশ্বাস। এ দিন দুপুরে সংবাদ সম্মলেন করে সংগঠনটি।
স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সুনামের অধিকারী ও সাহসী ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতিত্ব এম হাফিজউদ্দিন খান। সংগঠনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুজনের সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক, প্রফেসর সিকান্দার খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ড. শাহনাজ হুদা এবং রোবায়েত ফেরদৌস।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইনে নির্দেশিত ‘স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করার’ আইনের এ বিধানের কার্যকারিতা প্রদানের লক্ষ্যে অনুসন্ধান কমিটিকে যথাযথ কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করা আবশ্যক। এ সম্পর্কে আমরা কমিটির কাছ থেকে এ পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পাইনি। তবে প্রথম বৈঠকে অংশ নেওয়া সার্চ কমিটির একজন বলেছেন, গতবার সার্চ কমিটি যেভাবে কাজ করেছিল এবারও সেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ বিষয়টি আমাদের মধ্যে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। কারণ গত অনুসন্ধান কমিটির কাছে আমাদের কারো কারো দাবি জানানো সত্ত্বেও কমিটি কোনোরূপ স্বচ্ছতার চর্চা করেনি।
এছাড়াও ২০১৭ সালের অনুসন্ধান কমিটি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে কিনা সে ব্যাপারেও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। তাই কমিটিকে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের জন্য কমিটির কার্যপদ্ধতি অবিলম্বে জনগণকে অবহিত করা প্রয়োজন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনুসন্ধান কমিটিকে শুধু নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করলেই হবে না, কমিটি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে তাও জনগণের কাছে প্রতীয়মান হতে হবে। এছাড়া কী মানদণ্ডের ভিত্তিতে ও কী পদ্ধতিতে কমিটি তার বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের সুনাম যাচাই করবেন তাও জনগণকে জানানো জরুরি। কমিটি যা প্রকাশ করেছে তাতে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়নি। কারণ কাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তা প্রকাশ করলেও কারা প্রস্তাব করেছে, তা কমিটি প্রকাশ করেনি। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করলে বা তথ্য গোপন করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না।
পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে সৎ, যোগ্য ও সুনামের অধিকারী ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য কমিটির প্রতি কয়েকটি দাবিও জানায় সুজন।
অনুসন্ধান কমিটিকে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে বিরাজমান আস্থার সংকট দূর করার জন্য তার কার্যপদ্ধতি অবিলম্বে জনগণকে অবহিত করা। একইসঙ্গে কী মানদণ্ডের ভিত্তিতে ও কী পদ্ধতিতে কমিটি তার বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের সুনাম যাচাই করবে এবং তাদেরকে অনুসন্ধান করে বের করবে তাও জনগণকে জানানো।
পরিপূর্ণ তথ্য প্রকাশ তথা কোনো কিছু গোপন না করার স্বার্থে অনুসন্ধান কমিটির প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত ৩২২ জনের (সঠিক সংখ্যা ৩১৫ জন) নামের পাশাপাশি প্রস্তাবকারী ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নাম প্রকাশ করা।
প্রাথমিক তালিকা থেকে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারীসহ ২০-৩০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে তা প্রকাশ করা। এরপর সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের সংক্ষাৎকার গ্রহণ করা, তাদের সম্পর্কে শুনানি করা এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে তাদের সম্পর্কে তথ্য নেওয়া।
অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পরিপূর্ণ সতর্কতা ও যথাযথ বিবেচনাশক্তি কাজে লাগিয়ে একটি প্রতিবেদনসহ ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা। রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর তিন দিন আগে প্রতিবেদনটিসহ চূড়ান্ত তালিকা জনগণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা। অনুসন্ধান কমিটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কমিটির কাজের প্রসেডিংসহ একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশ করার দাবি জানায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট আইনবিদ শাহদীন মালিক বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশে যেন একটা ভালো নির্বাচন হয়। আর এর প্রথম ধাপ হিসেবে ভালো নির্বাচন কমিশন যেন হয়। এখন পর্যন্ত কমিটি যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আগের তুলনায় ভালো। কিন্তু শুধু নাম প্রকাশ না করে কোন দল কার নাম দিয়েছে, সেটাও প্রকাশ করা উচিত। এতে করে নির্বাচন সম্পর্কে দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, অনুসন্ধান কমিটিকে সিরিয়াস মনে হচ্ছে না। প্রকাশিত নামের তালিকায় নামের বানান ভুল, পদবী ভুল, একই নাম কয়েকবার ইত্যাদি দেখা গেছে। এগুলো তাদের এ কাজে সিরিয়াসনেসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কমিটিকে আস্থা অর্জন করতে হবে। আরকেটি বিষয় হলো সংবিধান পরিবর্তনের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি এবং নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করবেন না, এমন বিধান যুক্ত করতে হবে।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের পরিচয়, প্রস্তাবক ইত্যাদি জানাতে হবে তাহলে স্বচ্ছতার পথে অগ্রগতি হয়েছে বলা যাবে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাটা নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আগে সে বিষয়ে কিছু হবে কি না সন্দেহ আছে, একটা ভালো নির্বাচন কমিশন অন্তত হোক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ