যশোর: ‘এক পায়ে যুদ্ধে জয় করা’ তামান্না আক্তার নূরাকে অভিনন্দনপত্র পাঠিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। যশোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহার মাধ্যমে মন্ত্রীর স্বাক্ষরিত অভিনন্দনপত্রটি তামান্নার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এদিকে, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের অভিনন্দনপত্র হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তামান্না নূরা। তিনি বলেন, আমার জীবনে বড় প্রাপ্তি যে, সরকারের এতো বড় পদের মন্ত্রী আমার খোঁজ খবর নিচ্ছেন, এতে আমার অনেক ভালো লাগছে। আগে নিজেকে অসহায় মনে হলেও এখন নিজেকে একা মনে হচ্ছে না। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই আমার পাশে রয়েছেন। আমাকে শুভেচ্ছাপত্র পাঠানোর জন্য মাননীয় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মন্ত্রীর শুভেচ্ছাপত্র গ্রহণের সময় তামান্নার পাশে উপস্থিত ছিলেন তামান্নার বাবা রওশন আলী। তামান্নার অদম্য ছুটে চলার পথে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সরকারের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিব দলের নেতাকর্মী খোঁজ খবর নেওয়ায় পাশাপাশি তামান্না স্বপ্ন পূরণের প্রতিশ্রুতিতে মেয়ের মতো খুশি তিনিও।
বাবা রওশন আলী বলেন, মেয়ে যে এতো কষ্ট করেছে যে; তার স্বপ্ন পূরণে সবাই এগিয়ে আসছেন, যা আমি জীবনে কল্পনাও করতে পারিনি। খুশিতে আমার বুকটা ভরে যাচ্ছে। ও যেন তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। এ জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন এক পা নিয়ে জন্ম নেওয়া জীবনের নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা তামান্নার বাবা।
যশোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, তামান্না নূরা আমাদের সমাজের অনুকরণীয়। সেইসঙ্গে অনুপ্রেরণার অনন্য উদাহরণ। তামান্নার স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানোর সাথে তার পক্ষে অভিনন্দনপত্র দেওয়া হয়েছে। পত্রটি পেয়ে তামান্নাসহ তার পরিবার খুব খুশি ও আনন্দিত। তামান্নার এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আগেও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা, হুইল চেয়ার, বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা এবং শিক্ষাবৃত্তিও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় তামান্নাকে দেখতে যান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীবের নেতৃত্বে বোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. আবদুল খালেক সরকার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র, কলেজ পরিদর্শক কে এম গোলাম রব্বানি। তারা তামান্নাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পাওয়ায় তাকে মিষ্টিমুখ করান।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না নূরা। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সম্প্রতি প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও। বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ও সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। একইসঙ্গে দুই বোন তামান্নার স্বপ্ন পূরনে যেকোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
ইউজি