ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে আসা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে ওই টিকাদান কেন্দ্রে হাজির হলে লাঠিপেটার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় টিকা নিতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীই হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৯ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। জেলায় বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০২ শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ ও ৬২ হাজার ৮৮ শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে বুধবার ৩ হাজার ১শ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়। আজ ওই কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। সকাল ১০টার দিকে টিকা দেওয়া শুরু হলে আগে টিকা নিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের নিয়োজিত ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা শুরু করেন। লাঠিপেটা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা ছুটোছুটি করতে থাকে। অনেকেই পাশের নর্দমায় পড়ে আহত হয়। ওই কেন্দ্রে রেড ক্রিসেন্টের পোশাকধারী আরও ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে, রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা কাউকে লাঠিপেটা করেননি।
টিকা নিতে আসা ভেলাজান উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনির শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলে, ‘শুরু থেকে আমরা সারি করেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভিড় বেড়ে যাওয়ায় বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করেই টিকাদান কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা তখন শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করেন। এতে ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। ’
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রওশন আকতার বলে, ‘স্বেচ্ছাসেবকরা শুধু ছেলেদের নয়, মেয়েদেরও মারধর করেছে। আমরা টিকা নিতে এসে মার খাব, এটা কেমন কথা? তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। ’
আখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আকতার বলে, ‘সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। আমাদের স্কুল থেকে প্রায় ৩০টি ইজিবাইকে করে আমরা হাসপাতালে এসেছি। নয়টার দিকে এসে দেখি প্রচুর ভিড়। লাইনে দাঁড়াতেই শুরু হলো লাঠিপেটা। বাঁচতে আমার তিন সহপাঠী নর্দমায় পড়ে আঘাত পাই। ’
আখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এহসানুল হক বলেন, একদিনে একসঙ্গে এত শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন নূর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা হচ্ছে এটা ঠিক না। তবে, এখানে টিকা নিতে একদিনে বেশি শিক্ষার্থী চলে এসেছে। টিকাগ্রহীতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের মধ্যে ঠেলাঠেলি হয়েছে। এটা সামাল দিতে স্বেচ্ছাসেবকরা হয়তো হাতে লাঠি নিয়েছিলেন। এটা শুনে সেখানে গিয়ে তাদের হাত থেকে লাঠি সরিয়ে ফেলেছি। ’
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘করোনার টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা কেন ঘটল তা খতিয়ে দেখব। আর শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে টিকা দিতে কেন্দ্র বাড়ানোর বিষয়টি ভেবে দেখছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
নিউজ ডেস্ক