রাবি: ‘আজ আমি ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত, এরপর কোনো গুলি হলে তা ছাত্রকে না লেগে যেন আমার গায়ে লাগে’। ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর আইয়ুব খান সরকার হামলা চালালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে সন্ধ্যায় সবার সামনে ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত নিজের শার্ট দেখিয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর শহীদ ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা।
১৯৬৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি। সার্জেন্ট জহুরুল হকের মৃত্যুর খবর শুনে দেশব্যাপী গণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৮ই ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার চেষ্টা করে। প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা তখন বুঝতে পারেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা মিছিল বের করলে অনেক ছাত্রের প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি নিজের জীবনবাজি রেখে ছাত্রদের মূল ফটক থেকে ফিরে যেতে বলেন। পাক সেনারা তখন মিছিলের সম্মুখভাবে অবস্থান করছিলেন।
এই সঙ্কটাপন্ন মুহূর্তে ছাত্রদের প্রাণ বাঁচাতে শামসুজ্জোহা নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সেনাদের। বলেছিলেন, ‘দয়া করে গুলি ছুঁড়বেন না, আমার ছাত্ররা এখনই চলে যাবে এখান থেকে। ’ কিন্তু সেনারা তার সব কথা উপেক্ষা করে গুলি চালাতে গেলে ড. জোহা নিজে এগিয়ে যান। তখন তার ওপরই গুলি চালায় সেনারা। আহত ড. জোহাকে সেনাবাহিনীর ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয় মিউনিসিপ্যাল অফিসে। সেখানে তাকে চিকিৎসা না দিয়ে দীর্ঘসময় অবহেলায় ফেলে রাখা হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৪টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই এই মহান শিক্ষক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পরে মহান এই শিক্ষককে সমাহিত করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে। যা এখন জোহা চত্ত্বর নামে পরিচিত। এছাড়া শহীদ ড. জোহাকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি হলের নামকরণ করা হয় শহীদ শামসুজ্জোহা হল।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কালো পতাকা উত্তোলন, শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং সকাল ১০টায় শহীদ জোহা স্মরণে রসায়ন বিভাগে আলোচনা সভা।
দিবসের কর্মসূচিতে আরও রয়েছে- কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত, বিকেল সাড়ে ৪টায় শহীদ শামসুজ্জোহা হলে দোয়া মাহফিল এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শহীদ শামসুজ্জোহা হলে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া সন্ধ্যা ৭টায় জুবেরি ভবনে রাবি শিক্ষক সমিতির আলোচনা অনুষ্ঠান এবং শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এদিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা থাকবে।
ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের ১ মে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি লন্ডনে একটি স্কলারশীপ পান। ১৯৬৪ সালে তিনি লন্ডন থেকে ফিরে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সর্বশেষ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২
এসআইএস