ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শহীদ মুক্তিযোদ্ধার জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প!

নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার পৈতৃক কৃষি জমি জবরদখলে নিয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর চড়কপাড়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান খাঁনের পরিবারের সদস্যরা।

শহীদ সোলায়মান খাঁনের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য মো. লুৎফর রহমান খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, সিএস ১৯৮, এসএ ২২৫ ও বিএস ৯০৭ খতিয়ানে এবং সিএস ১৫৩, এসএ ১৫৩ ও বিএস ২৬৭ দাগে তাদের ১ একর ২২ শতক পৈতৃক আবাদি জমি রয়েছে। তারা বংশ পরস্পরায় ওই জমি চাষাবাদ করে আসছেন। ২০১৩ সালে তারা স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমির খাজনা পরিশোধ করতে গেলে তৎকালীন তহশিলদার ওই জমি সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি উল্লেখ্য করে খাজনা নিতে অসম্মতি জানায়। পরবর্তীতে তিনি ওই জমি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্তির জন্য ২০১৩ সালে ৬ জানুয়ারি নীলফামারী  জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সৈয়দপুর উপজেলা সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) তফশিল বর্ণিত সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে সময় উপজেলা ভূমি অফিস থেকে সম্পত্তির কাগজপত্র, ভলিউম ও দখল বিষয়ে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় উল্লিখিত খতিয়ান ও দাগের ১ একর ২২ শতক জমি পরিত্যক্ত কিংবা খাস নয় এবং  জমি  পরিত্যক্ত তালিকা থেকে অবমুক্তির জন্য আবেদনকারীর দখলে রয়েছে। কিন্তু তারপরও উল্লিখিত পরিমাণ জমি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্তি নাহওয়ার জমির মালিক আদালতের শরণাপন্ন হন। তিনি জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে আদালতে একটি মামলা করেন (মামলা নং- ৯৪/১৪)। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান খাঁনের পরিবারের সদস্যরা

এদিকে ওই জমিরমালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকলেও গত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু করে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে লুৎফর রহমান খান পৈতৃক জমিতে সরকারি বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চান। এ সময়  উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয় সরকারি খাস জমিতে গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বাধা দিলে তার অনেক ক্ষতি হবে এবং মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে জেল খাটতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, পৈতৃক ওই জমিতে চলতি ইরি- বোরো ধানের চারা রোপননের সব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন জমিটি পরিত্যক্ত খাস দেখিয়ে সেখানে গৃহ নির্মাণ শুরু করায় সেখানে ধানের চারা রোপন করতে ব্যর্থ হন।

তিনি বলেন, ওই আবাদি জমিটুকুই তাদের সম্বল। ওই জমিতে উৎপাদিত ফসল দিয়ে তারা দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেতে পারেন। কিন্তু ইরি-বোরো চারা রোপন করতে না পারায় আগামীতে পরিবারে সদস্যদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ অবস্থায় তারা পৈতৃক জমিতে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান খানের পরিবারের সদস্য মো. জাকির হোসেন, মো. মমিস খান,বখতিয়ার খান,নায়েব আলী খান, মঈনুল খান, আইয়ুব খান, শাহীন খান উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান জানান, যেখানে আশ্রয়ণ- ২ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি সরকারি পরিত্যক্ত জায়গা। আমি গত বছরের ১৬ নভেম্বর দাপ্তরিকভাবে সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি তালিকা থেকে এক নম্বর খাস তালিকায় তা অন্তর্ভুক্তের জন্য উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবরে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।