বাগেরহাট: ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত স্থাপনা বিখ্যাত মুসলিম শাসক উলুঘ খানজাহান আলী (রহ.) এর বসতভিটা খননে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা এলাকায় বসত ভিটা চত্বরে পাঁচ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
এ সময়, প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা, বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মাদ মোছাব্বেরুল ইসলাম, প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ, ষাটগম্বুজ ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চুসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
প্রদর্শনীর প্রথম দিনেই দেখতে স্থানীয়রাসহ দর্শনার্থীরা এসব মূল্যবান প্রত্নতত্ত্ব দেখতে আসতে শুরু করেছেন।
স্থানীয় শিক্ষার্থী জুম্মান আলী বলেন, এখানে প্রত্মতাত্ত্বিক খননে পাওয়া নিদর্শনের প্রদর্শনী হচ্ছে তাই শুনে এসেছি। এখানে পাওয়া ৬শ’ সাড়ে ৬শ’ বছর আগের প্রত্নতত্ত্ব দেখে খুব ভাল লেগেছে।
উদ্বোধন শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, উলুঘ খানজাহান আলী (রহ.) প্রায় ৬শ’ বছর আগে খলিফাতাবাদ নামে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ষাটগম্বুজ মসজিদসহ বাগেরহাটের অনেক বিখ্যাত স্থাপনা তার হাতেই তৈরি। এখানে তার বসভিটা ছিল। এটা আমাদের অনেকেরই অজানা ছিল। এই খননের মাধ্যমে আমরা অনেক নতুন কিছু জানতে পেরেছি। খননের ফলে যে প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে সেসব মানুষকে দেখার সুযোগ করে দিতে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাগেরহাটসহ প্রত্নতত্ত্ব প্রেমিরা অনেককিছু জানার সুযোগ পাবেন।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, খানজাহান আলী (রহ.) এর বসতভিটা ১০ একর জমি নিয়ে ছিল। পুরো ১০ একর জমিই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া দর্শনার্থীরা যাতে সহজে এই বসতভিটায় আসতে পারেন সেজন্য একটি রাস্তা তৈরি করা হবে।
প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাটের বসতভিটা ডিবিতে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে এখনও খনন কাজ চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন কালপর্বের ইটের দেয়াল, চুন-সুরকির মেঝে, পানি নির্গমণ নালা, ব্রিত সলিং, পাথওয়ে, পোড়ামাটির তৈজসপত্র, হাড়ি, ঘট, থালা-বাটি, পিরিচ, কলমের ভগ্নাংশ, তৈল প্রদীপ, অলংকৃত ইট, পোড়ামাটির গুটিকা, পোড়ামাটির বল, কাঁচের চুড়ি, গ্লেইজডওয়ার, টালি, প্রদীপদ্বানী, নল, সিঁড়ি, পায়ে চলার পথ, জালের গুটি, পোড়ামাটির পুঁতি, লাল, কালা ও ধূসর বর্ণের মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। খুব শিগগিরই আমরা এই খনন কাজ শেষ করব।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আগামী মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে। বিশেষ করে বাগেরহাটবাসীর জন্য, কারণ তারা খানজাহানকে হৃদয়ে ধারণ করেন। আমরা চেয়েছি, বাগেরহাটবাসী প্রথমে এই প্রত্নবস্তুগুলো দেখবেন। তারপর এগুলো নথিভুক্ত করা হবে। গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। আমরা আশা করি এই পাঁচদিনে শুধু বাগেরহাট নয়, অন্যান্য অঞ্চল থেকেও দর্শনার্থীরা আসবেন এখানে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে খানজাহান আলী (রহ.) এর নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদসহ ১৭টি স্থাপনাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা এলাকায় অবস্থিত খানজাহান আলী (রহ.) এর বসতভিটা অন্যতম। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও দীর্ঘদিন ধরে খানজাহানের এই বসতভিটা অবহেলিত ছিল। স্থানীয়দের গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছিল বসতভিটার ডিবিগুলো। ২০০০ সালের পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই বসত ভিটাকে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব নির্ণয়ের জন্য কয়েক দফায় খনন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এমএমজেড