নরসিংদী: মিঠু হোসেন (২৪) পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা করে পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় বিভিন্ন হাট থেকে শাড়ি সংগ্রহ করে অনলাইনে তা বিক্রি করতেন।
নিহত মিঠু সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রায়পুর এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তিনি সিরাজগঞ্জের একটি ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের বিএ প্রথম বর্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা করতেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের হুগলিয়াপাড়ায় খড়ের গাদার নিচে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন লোকজন। খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হতে থাকেন। পরে মনোহরদী থানা পুলিশকে এ ঘটনা জানানো হলে দুপুরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহত ওই যুবকের পিঠে, গলায় ও চোখের নিচে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। পরে সিআইডি, ডিবি ও পিবিআইয়ের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করেন। মনোহরদীতে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতেই সিরাজগঞ্জ থেকে মিঠুর পরিবারের সদস্যরা মনোহরদী থানায় আসেন। রাত ১২টার দিকে পুলিশের কাছে থাকা ছবি দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন মিঠুর বড় বোন মিনু আক্তার। অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে রাতেই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন মিনু আক্তার।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, মিঠুর বাবা মোসলেম উদ্দিন ছয় মাস আগে মারা গেছেন। তার মা দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত।
গত বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জ থেকে রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে নরসিংদী পৌঁছেন মিঠু। পরিবারের সদস্যদের কাছে কল করে ঠিকঠাক পৌঁছানোর খবর জানান। পরে মিঠু রাতে বড় বোন মিনু আক্তারকে ফোন দিয়ে তাকে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে জানায়। তার বিকাশ নম্বরে দ্রুত এক লাখ টাকা পাঠিয়ে দিতে বলেন মিঠু। না হলে ‘তারা আমাকে মেরে ফেলবে’ বলেন। তখন অপহরণকারীরা মিঠুর কাছ থেকে ফোন নিয়ে জানায় টাকা দিলেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে মিঠুর বোন টাকা পাঠানোর জন্য ওদের কাছে সময় চায়। এ সময় ফোনে কথা বলার পুরোটা সময় মারধর ও মিঠুর কান্নার শব্দ শোনা যায়। সর্বশেষ রাত ১২টায় মায়ের সঙ্গে মিঠু কথা বলার পর থেকেই সারা রাত তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এরপর সিরাজগঞ্জ সদর থানায় গিয়ে এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
মামলার বাদী ও মিঠুর বড় বোন মিনু আক্তার বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার সকালে টাকা পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ওই সময় অপহরণকারীরা ফোন দিয়ে আবার টাকা চাইলে আমি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। ওরা টাকা দিলে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলাবে জানায়। এরপর থেকে বারে বারে ফোন দিয়ে নম্বর বন্ধ পাচ্ছিলাম। পরে নরসিংদীতে মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে হাসপাতালে এলে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই। আমার ভাই চেয়েছিল পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা করে পরিবারকে সাহায্য করতে। কিন্তু অপহরণকারীরা তাকে তা করতে দেয়নি। খুবই নির্মমভাবে পিটিয়ে আমার আদরের ভাইকে হত্যা করেছে। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মিঠুকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যার পর খড়ের গাদার নিচে ফেলে গেছে। জায়গাটি নির্জন হওয়ায় অপরাধীরা খুব সহজে মরদেহটি ফেলে পালিয়ে গেছে। আমরা তথ্য প্রযুক্তি ও বিভিন্ন সূত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২
আরবি