ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাস্টার্স শেষে বেছে নিলেন কৃষি, স্বপ্ন উদ্যোক্তা হওয়া

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২
মাস্টার্স শেষে বেছে নিলেন কৃষি, স্বপ্ন উদ্যোক্তা হওয়া ক্ষেতে কীটনাশক দিচ্ছেন বিদ্যুৎ

ঠাকুরগাঁও: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগে পড়াশুনা শেষ করেছেন কে এম বদরুদ্দোজা বিদ্যুৎ। সংসারের অবস্থা তেমন ভালো নয়।

অভাবের মধ্য দিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন। পড়াশুনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে বেছে নিলেন কৃষি কাজ। মানুষের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন এ কাজ। তার স্বপ্ন উদ্যোক্তা হওয়া।

কে এম বদরুদ্দোজা বিদ্যুৎ ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জের পৌরসভা এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত হারুনুর রশিদের ছেলে। স্ত্রী, মা, দুই ভাই ও এক বোনকে নিয়েই তার সংসার।

কথা হলে কে এম বদরুদ্দোজা বিদ্যুৎ বাংলানিউজকে বলেন, আমি পড়াশুনা শুরু করি মাদরাসায়। যখন ২০০৩ সালে মাদরাসা থেকে এসএসসি পাস করি তখন আমার বাবা মারা যান। তারপর থেকে আমাকে সংসারের হাল ধরতে হয়। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে আমি মাদরাসা থেকে এইচএসসি পাস করি। এরপরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হই। পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে পড়াশুনা ও সংসার খরচ চালাতাম।

তিনি বলেন, পড়াশুনা শেষে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দেওয়া শুরু করলাম। তেমন সুবিধে করতে পারিনি। তাই আর চকিরির পেছনে ছুটিনি। এক পর্যায়ে গ্রামে এসে শুরু করি আমের ব্যবসা। ব্যবসায় তেমন লাভ না পেয়ে শুরু করলাম কৃষি কাজ। আসলে ইচ্ছা থাকলে কৃষি কাজ করে অনেক কিছু করা যায়। তাই আমি কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।

কথার এক ফাঁকে তিনি বলেন, গ্রামে এসে হঠাৎ করে বিয়ে করলাম। আমার বউ মুস্তারিন আক্তার রানিশংকেল আবাদ কাচিয় দাখিল মাদরাসায় কামিল দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন।

বিদ্যুৎ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে কৃষি কাজ করছি বলে গ্রামের মানুষ নানা ধরনের কথা বলেন। মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। আমি আর আমার স্ত্রী দু’জনেই শিক্ষিত। আমার কৃষি কাজে স্ত্রী যথেষ্ট সাহায্য করে আমাকে। মাঠে কাজ করার সময় সে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসে। আমরা মাঠে এক সঙ্গে খাবার খাই। কৃষি কাজে অন্য রকম এক আনন্দ আছে।

বিদ্যুতের স্ত্রী মুস্তারিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে গ্রামে এসে কৃষি কাজ করছেন দেখে প্রথমে খুব খারাপ লাগত। তবে এখন খারাপ লাগাটা আর নেই। এখন আমি আমার স্বামীকে কাজে সহযোগিতা করি।

পীরগঞ্জ পৌরসভা এলাকার জেট বাবুল নামে এক সাংবাদিক বাংলানিউজকে বলেন, ছোটবেলায় বিদ্যুতের বাবা মারা যায়। জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যায় সে। ইচ্ছে শক্তি থাকলে আসলে সব করা যায়।

পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, পীরগঞ্জ পৌরসভা এলাকার কে এম বদরুদ্দোজা বিদ্যুৎ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগের মাস্টার্স শেষ করে কৃষি কাজ করছেন। আমি এটা ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি। তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই শিক্ষিত। তাদের ইচ্ছে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। আমরা তাদের ইচ্ছেকে সাধুবাদ জানাই। সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পেলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।