লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার রহমতখালী ও রামগঞ্জ উপজেলার বীরেন্দ্র খাল দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে। জেলার চন্দ্রগঞ্জ থেকে জেলা শহর পর্যন্ত রহমতখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে খালের দু'পাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা।
এতে দিন দিন সংকুচিত হয়ে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী রহমতখালী খাল এখন তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এছাড়া বাজারকেন্দ্রীক ময়লা-অবর্জনা ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে খালের পানি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন বাজার এবং পৌর এলাকার ঝুমুর সিনেমাহল সংলগ্ন, মাদাম, বাজার ব্রিজ সংলগ্ন খালের দু’পাড়ে, গোশত হাটা সংলগ্ন মসজিদের পাশে রহমতখালীর পাড়ে স্থায়ী এবং অস্থায়ী ইমারত বা দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ কয়েকটি স্থানে পুরনো স্থাপনার পাশাপাশি নতুন করে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধাপ্রাপ্ত না হওয়ায় দখলদাররা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঝুমুর সিনেমাহল সংলগ্ন ময়দার মেলের পেছনের বিস্তীর্ণ অংশ ও বাজার ব্রিজের পূর্ব পাশে হায়দার শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে খালের দু’পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। আর মান্দারী বাজারের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া রহমত খালী সরু নালায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জাতীয় নদ-নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনায় অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় রহমতখালী খালের শুধুমাত্র জেলা শহরের মাদাম থেকে বাজার ব্রিজ অংশ পর্যন্ত ৭৬ নম্বর মজুপুর মৌজার ২১৩ দাগ, ৬৩ বাঞ্চানগর মৌজার ৮৪০১ ও ১৬৬২২ দাগে মাত্র ৬জন দখলদারদের নাম রয়েছে। শুধু শহর অংশেই অনেক দখলদার তালিকার বাইরে রয়ে গেছে।
আর শহরের বাইরে জকসিন, মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ অংশের তালিকা তৈরি করা হয়নি। এছাড়া রামগঞ্জের বীরেন্দ্র খালের ৯৬ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা প্রণয়ন করেছে উপজেলা প্রশাসন। রামগঞ্জ মধ্য বাজার ব্রিজ থেকে মডেল মসজিদ পর্যন্ত ৬৫ নম্বর আঙ্গরপাড়া ও ৬৭ নম্বর কাজিরখিল মৌজার অংশে খালের ওপর দখলদাররা অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি করে রেখেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে দখলদাররা রামগঞ্জের বীরেন্দ্র খাল দখল করে ইমারত নির্মাণ করে ব্যবসা ও বসবাস করে আসছে। ফলে প্রবাহমান ঐতিহাসিক এ বীরেন্দ্র খালটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও কৃষিকাজে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা খালের দু’পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানালেও অজ্ঞাত কারণে সেগুলো অপসারণ করা হয়নি। উল্টো দিন দিন নতুন স্থাপনা তৈরি হতে দেখা গেছে।
লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র মোজ্জামেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, গত কয়েকদিন থেকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ময়লা পরিষ্কার করলেও খাল দখলের কারণে আবার ময়লা জমে যায়। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান চালিয়ে রহমতখালী খালের পৌরসভা অংশে অবৈধ দখল মুক্ত করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, রামগঞ্জের বীরেন্দ্র খাল এবং সদর উপজেলার রহমতখালী খালের শুধুমাত্র বাজার অংশে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এবং আমাদের সার্ভেয়ার কর্তৃক যৌথভাবে জরিপ ও তদন্তের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করেছে। জেলা-উপজেলা প্রশাসন এবং পৌর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। খালের যে সব স্থানে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়নি, সেগুলো সরেজমিনে দেখে তালিকা করা হবে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে সেটা থমকে ছিল। কিন্তু এবার খালের দু’পাড়ে সৌন্দর্যবর্ধন করে জনসাধারণের হাঁটার রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২
আরএ