ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাবনত মানুষের ঢল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাবনত মানুষের ঢল ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

ঢাকা: মাত্র ঘুম ভেঙেছে দেড় বছরের ছোট্ট শিশু ইয়ারার। তারপরই মা-বাবার হাত ধরে চলে এসেছে শহীদ মিনারে।

চোখে যেন এখনো লেগে আছে ঘুম। তবে শহীদ মিনারের বেদীতে যখন সে ফুল দিতে উঠেছে, তখন থেকেই উচ্ছলতা ছুঁয়ে গেছে তাকে। সেই উচ্ছলতায় মায়ের কোলে উঠে মাকে সঙ্গে নিয়ে প্রজাপতির মতো শহীদ মিনারের পুরো প্রাঙ্গণ তার উড়ে বেড়ানো।

কথা হলে ইয়ারার মা ডা. সামসুন্নাহার রনি বলেন, ছোট থেকে আমি পরিবারের শিক্ষা পেয়েছি যে এই দিনটিতে শহীদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত। আমিও আমার শিশুদের সেটিই শেখাতে চাই। তবে আমি মনে করি শুধু একটি দিন নয়, বছরের প্রতিটি দিন বাংলা ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার করা উচিত, এই ভাষাটা নিয়ে আমাদের আরও গর্ব করা উচিত।

সত্যিই যেন তাই, পাকিস্তানের জান্তারা কেড়ে নিতে চেয়েছিল আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা। লুণ্ঠন করতে চেয়েছিল বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য-গর্বের শ্রেষ্ঠ স্থানটি। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা তা হতে দেয়নি। বুকের রক্ত দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠা করেছে মাতৃভাষার সম্মান। ১৯৫২ সালের এই দিনে (২১ ফেব্রুয়ারি) রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল মাতৃভাষা বাংলার অধিকার। আজ রক্তাক্ত সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে গভীর শোক ও বেদনার দিন; একই সঙ্গে গৌরবেরও।

সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ঘড়ির কাঁটায় সকাল যখন ৭টা, পলাশী মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা মানুষের সারি পলাশী মোড় ছাড়িয়ে নিউমার্কেট এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। কারো হাতে একটিমাত্র ফুল, কারো হাতে একগুচ্ছ। কারো হাতে ছোট পতাকা। তবে সবার মুখে অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি। ’ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মাইকে সেই সুর ছড়িয়ে পড়ছিল দিকে দিকে। মানুষের এই শ্রদ্ধা বলে দিচ্ছিল, মাতৃভাষা আর দেশের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের টান অকৃত্রিম।

কথা হয় শ্রদ্ধা জানাতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একুশ আমাদের অহংকার। ৫২ আমাদের সাহসী হতে শিখিয়েছে। যারা আমাদের এই সাহস দিয়েছে, তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশেই ফুল দিতে যাচ্ছি। ’

সোমবার অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অহংকার আর শোকের এই দিনটি পালন করছে জাতি। একুশের প্রথম প্রহরে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাজানো হয়।

গত বছরের মতো এবারও কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সশরীরে শহীদ মিনারে আসেননি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসা নাগরিকদের যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশ্যে আগত সবার করোনা টিকা নেওয়ার সনদ সঙ্গে রাখতে হবে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
এইচএমএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।