খুলনা: ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে গেছে খুলনার শহীদ মিনারের বেদি। জাতীয় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ভাষা দিবসে বেদনা আর গর্ব নিয়ে মানুষের সব পথ যেন এক হয়ে মিশে গেছে শহীদ মিনারে।
বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ভাষাশহীদদের স্মরণ এবং সর্বত্র বাংলা ভাষা চালুর প্রত্যয় নিয়ে খুলনায় পালিত হচ্ছে শোক আর গর্বের অমর একুশে ফেব্রুয়ারি।
কালো ব্যাজ ধারণ করে মহানগরীর শহীদ হাদিস পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসা দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের হাতে রয়েছে ফাল্গুনে ফোটা রঙিন ফুলের স্তবক, কণ্ঠে বিষাদমাখা চিরচেনা গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি...। ’ অনেকে এসেছেন প্রিয় সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে। মুখে বর্ণমালা এঁকে। শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী রুশদা মালিহা। শহীদ বেদিতে ফুল দিতে পেরে ভীষণ খুশি বলে জানায় মালিহা।
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়াতে এবারও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ ছিল। আগে থেকে বলা হলেও সংগঠন পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচজনের বেশি মানুষও আসছেন। তবে অনেকে মধ্যে সচেতনতা দেখা গেছে, মাস্ক পরে ও নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন। আবার কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।
প্রথম প্রহরে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা। রোববার দিনগত (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা ১ মিনিটে খুলনা শহীদ হাদিস পার্কে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধা খুলনা মহানগর ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।
এছাড়া বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, রেঞ্জ ডিআইজি, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি), জেলা পুলিশ, সিভিল সার্জন, ফায়ার সার্ভিস, খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ, খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, আনসার ভিডিপি খুলনা রেঞ্জসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন ।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সব বেসরকারি ভবনে সঠিক নিয়মে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
সকাল সাড়ে নয়টায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সিটি করপোরেশনের আয়োজনে নগরভবনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাদ জোহর সব মসজিদে শহীদদের রুহের মাগফিরাত ও দেশের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিল এবং সুবিধামতো সময়ে মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য উপসনালয়ে অনুরূপ বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।
২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় খুলনা জেলা তথ্য কার্যালয়ের উদ্যোগে শহীদ হাদিস পার্কে ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং একুশের পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় খুলনা শহিদ হাদীস পার্কে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
এমআরএম/আরআইএস