ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শাহজালাল সার কারখানা: ইকবালের ১০ ফ্ল্যাট, ৪০ গাড়ি!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
শাহজালাল সার কারখানা: ইকবালের ১০ ফ্ল্যাট, ৪০ গাড়ি!

সিলেট: অনিয়ম দুর্নীতির ষোলকলা পূর্ণ করেছেন ফেঞ্চুগঞ্জের শাহজালাল সারকারখানার সাবেক সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক ও হিসাব বিভাগীয় প্রধান খোন্দকার মো. ইকবাল। অর্থ-আত্মসাতে তার সঙ্গী হয়েছেন কারখানার সাবেক রসায়নবিদ নেছার উদ্দিন ও স্ত্রী, শ্যালক ও ঘনিষ্টজন এবং অন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও।

এখন ওই দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইকবাল। শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্পের অনুকূলে  ঢাকার দিলকুশা জনতা ব্যাংক শাখার দুটি হিসাব থেকে অর্থ-আত্মসাৎ করেন তিনি। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভুয়া বিল-ভাউচার ও জালিয়াতির মাধ্যমে এ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।

অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তথ্য পেয়েছে আত্মসাতকৃত অর্থে নামে ও বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সার কারখানার সাবেক সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক ইকবাল। এ ঘটনায় ওই চক্রের বিরুদ্ধে নতুন করে ১১টিসহ ২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ইকবালের নেতৃত্বে চক্রটির বিরুদ্ধে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ৫ হাজার ৪৫৬ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ১১টি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

জানা গেছে, ইকবাল ও তার স্ত্রী হালিমা এবং শ্যালক জামসেদুর রহমান মিলে ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৯১ হাজার ৯৩৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে ইকবাল ও তার স্ত্রী হালিমা মিলে আত্মসাৎ করেছেন ১০ কোটি ৩০ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৬ টাকা। স্ত্রী হালিমা আক্তার মেসার্স নুসরাত ট্রেডার্স, মেসার্স টি আই ইন্টারন্যাশনাল ও ইউটোপিয়া প্রোপার্টিজ নামের তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক।

স্ত্রী হালিমা আক্তারের তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, ৮৬/৪ সিদ্ধেশ্বরী রোড, রমনা, ঢাকা। একই ঠিকানা খোন্দকার ইকবালেরও।

এর আগে, গত বছরের ৪ আগস্ট ইকবাল ও তার স্ত্রী হালিমা, শ্যালক জামসেদুর রহমানসহ ওই চক্রটির বিরুদ্ধে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ২৪ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আরও ১৫টি মামলা দায়ের করেছিল দুদক। এর মধ্যে মোট ৫২ কোটি ৩৮ লাখ ৫ হাজার ৪৮০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইকবাল চক্র।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইকবাল সিদ্ধেশ্বরী, বনশ্রীসহ ঢাকার চারটি স্থানে অন্তত ১০টি ফ্ল্যাটের মালিক। কাকরাইল ও মালিবাগ এলাকায় রয়েছে জমিসহ ভবন। এছাড়া ঢাকার বাইরে নিজ জেলা ফেনীতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ রয়েছে তার। দুদকের প্রাথমিক তদন্তেও তার অবৈধ সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইকবাল রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতেই ১১শ’ বর্গফুটের পাঁচটি ফ্ল্যাটের মালিক। বনশ্রীতে রয়েছে তার আরও তিনটি ফ্ল্যাট। খিলগাঁও এবং বাসাবোতে রয়েছে আরেকটি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট। কাকরাইল ও মালিবাগে জমিসহ ভবনও কিনেছেন তিনি। দুটি ভবন ভাড়া দেওয়া, দুটিতে চালু আছে রেস্টুরেন্ট ও খাবার দোকান, চারটি চেইন সুপারশপ, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রেন্ট-এ কারের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তার বিভিন্ন ধরনের অন্তত ৪০টি গাড়ি রয়েছে। নিজ জেলা ফেনীর পরশুরাম উপজেলাসহ ফেনীতেও নামে-বেনামে অনেক সম্পদ রয়েছে।

দুদকের দায়ের করা নতুন ১১টি মামলার এজাহারে দেখা যায়, দুদক তদন্ত নম্বর- ১/২২, মামলায় ইকবাল ও তার শ্যালক কুমিল্লার জামসেদুর দুটি চেকে পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার ৫৫৮ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া ২/২২ নম্বর মামলায় সার কারখানার সাবেক রসায়নবিদ নেছার উদ্দিন আহমদ ও ইকবাল মিলে আরও পাঁচটি চেকে তুলে নেন ৬ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ টাকা। ৩/২২ নম্বর মামলায় ইকবাল ২১টি চেকে একাই এক কোটি ৮৫ হাজার ৬৬২ টাকা আত্মসাৎ করেন। ৪/২২ নম্বর মামলায় সাবেক রসায়নবিদ নেছার উদ্দিন আহমদ ও ইকবাল ছয়টি চেকে ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৭৫২ টাকা আত্মসাৎ করেন। ৫/২২ নম্বর মামলায় মেসার্স নুসরাত ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী স্ত্রী মোছা. হালিমা আক্তার ও তার স্বামী ইকবাল মিলে ১৮টি চেকে চার কোটি ৮৮ লাখ ২৮ হাজার ৭৭০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ৬/২২ নম্বর মামলায় ইকবালের স্ত্রীর মালিকানা টিআই ইন্টারন্যাশনালের নামে ছয়টি চেকে তিন কোটি ৫ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। ৭/২২ নম্বর মামলায় ইকবাল তার শ্যালক জামসেদুরের প্রতিষ্ঠানের নামে দুটি চেকে আরও ৬৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৩৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। ৮/২২ নম্বর মামলায় নোয়াখালীর হেলাল উদ্দিনের মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ দিয়ে চারটি চেকে ৯৫ লাখ ৮১ হাজার ৩২৭ টাকা আত্মসাৎ করে নেন। ৯/২২ নম্বর নিজের নামে একটি চেকে ২ লাখ ৬ হাজার ১৫০ টাকা আত্মসাৎ করেন ইকবাল। ১০/২২ নম্বর মামলায় স্ত্রীর মালিকানা আরেকটি ইউটোপিয়া প্রোপারটিজ দিয়ে চারটি চেকে দুই কোটি ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার ১৬১ টাকা আত্মসাৎ এবং ১১ মামলায় ঢাকা মিরপুরের মাসুদ রানার মালিকানাধীন সানসাইন আইটি সল্যুউশন প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ইকবাল আরও দুটি চেকে চার লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৫ টাকা আত্মসাৎ করেন।

মামলায় আরও অভিযুক্তরা হলেন- ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুসরাত ট্রেডার্স, মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. নুরুল হোসেন, ফাল্গুনী ট্রেডার্সের এমডি এএসএম ইসমাইল খান, মেসার্স আয়মান এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল হক, মেসার্স এন আহমদ অ্যান্ড সন্সের মালিক নাজির আহমদ (বচন), মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হেলাল উদ্দিন, মেসার্স সাকিব ট্রেডার্সের মালিক মো. আহসান উল্লাহ চৌধুরী।

 দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেটের উপ-পরিচালক মো. নূর-ই-আলম বলেন, ‘দুদকের প্রাথমিক তদন্তে ইকবাল, তার স্ত্রী হালিমা, শ্যালক জামসেদসহ চক্রটির অবৈধ সম্পদের প্রমাণ মিলেছে। তবে, ইকবালের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। চক্রটির বিরুদ্ধে ৫২ কোটি টাকা আত্মসাতে মোট ২৬টি মামলা হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
এনইউ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।