ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুই যুবককে পিটিয়ে এলাকা ছাড়ারও নির্দেশ কাউন্সিলরের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
দুই যুবককে পিটিয়ে এলাকা ছাড়ারও নির্দেশ কাউন্সিলরের

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে দুই যুবককে নির্যাতনের পর এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমন বিন তাহের ওরফে শহিদুল ইসলাম পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে।  

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে অটোরিকশা চুরির অপবাদ দিয়ে কাউন্সিলর সুমন নির্যাতিত দুইজনসহ তিন ব্যক্তিকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন।

অমানবিক নির্যাতনের শিকার মো. ফারুক হোসেন (৩৫) ও মো. হারুন (৩০) জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রাতেই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে অভিযোগ তুলে নিতে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে কাউন্সিলরের লোকজন।  

নির্যাতিত ফারুক হোসেন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিসিক এলাকার মধ্য বাঞ্চানগর গ্রামের কালাকাজি বাড়ির মৃত নুর ইসলামের বড় ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভ্যান শ্রমিক। হারুন একই এলাকার পাইক বাড়ির আবু ছিদ্দিকের ছেলে। পেশায় অটোরিকশাচালক। তারা দু'জনে মামাতো ফুফাতো ভাই।  

স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েকদিন আগে তাদের এলাকা থেকে তারেক হোসেন নামে এক ব্যক্তির ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা চুরি হয়। তারেক অটোরিকশাটি ভাড়ায় চালাতো। সেটি চুরির অভিযোগ তুলে ফারুক এবং হারুনকে ডেকে নেয় কাউন্সিলর সুমন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় কাউন্সিলর সুমন বাঁশের লাঠি এবং ডিস লাইনের ক্যাবল দিয়ে তাদের বেদম মারধর করেন। একপর্যায়ে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও নির্যাতন চলতে থাকে। এ সময় তার সহযোগী স্থানীয় মাদকসেবী রনিও তাদের মারধর করেন।  

নির্যাতিতরা বলেন, আমরা কোনো ধরনের চুরির সঙ্গে জড়িত না। কিন্তু কাউন্সিলর সুমন আমাদের পিটিয়ে চুরির কথা স্বীকার করতে বলেন। আমরা তো চুরিই করিনি, তাহলে চুরির কথা জানবো কিভাবে? 

নির্যাতিত হারুন বলেন, কয়েক মাস আগে আমার বাবার একটি অটোরিকশা চুরি হয়ে যায়। আমরা সেটিরও খোঁজ পাইনি। কিন্তু আমার নামেই চুরির অপবাদ দিয়ে পায়ের গিরা ও কোমরে বেদমভাবে পিটিয়েছে কাউন্সিলর। আমরা গরিব মানুষ। কাউন্সিলর হয়ে কেন আমাদের ওপর তিনি এমন নির্দয়ভাবে নির্যাতন করলেন।

নির্যাতিত ফারুক বলেন, কাউন্সিলর সুমন আমাকে পেটাতে পেটাতে মাটিয়ে ফেলে দিয়েছেন। আমি তাকে বার বার অনুনয় করার পরও তার মন গলেনি। তার পিটুনিতে আমার গালে এবং পিঠে ব্যাপক জখম হয়েছে।  

ফারুকের মা আয়েশা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, কাউন্সিলর সুমন তার অফিসে দরজার গ্লাস লক করে চোখের সামনে আমার ছেলেকে পিটিয়েছে। সে ছটফট করতেছে কিন্তু আমি তাকে ধরতে পারিনি। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। তার প্রতি সন্দেহ হলে তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে পারতেন। কিন্তু কাউন্সিলর কিভাবে নিজেই হাতে আইন তুলে নিলেন।  

তিনি বলেন, কাউন্সিলর সুমন আমাদের কাছ থেকে কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন। আমি যেন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিই। তিন মাসের ভেতরে টাকা না দিতে পারলে ৫ বছরের জন্য সপরিবারে ছেলেকে নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাই।  

তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রাতে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এরপর থেকে কাউন্সিলরের লোকজন হাসপাতালে এসে এখান থেকে আমাদের চলে যেতে বলেছেন। এছাড়া থানা থেকে যেন আমি অভিযোগ তুলে নেই- সেজন্যও চাপ দিচ্ছে কাউন্সিলরের লোকজন।  

নির্যাতিত হারুনের মা রোকেয়া বেগম বলেন, কোনো আপরাধ ছাড়াই আমার ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।  

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কাউন্সিলর সুমন বিন তাহের বলেন, আমি কাউকে নির্যাতন করিনি। যাদের অটোরিকশা চুরি হয়েছে তারাই ওদের মারধর করেছে।  

জরিমানা এবং এলাকা ছাড়ার নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা চুরির ঘটনা স্বীকার করেছে। তাই অটোরিকশা বাবদ টাকা দিতে বলেছি। আর চুরি না ছাড়লে এলাকা থেকে চলে যাওয়ার কথা বলি।  

এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, কাউন্সিলর সুমনের বিরুদ্ধে নির্যাতনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।