ঢাকা: বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এলে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় গণভবনে থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কথা সাংবাদিকদের জানান।
ভর্তুকির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সভায় বিদ্যুতের মিটারিং এর বিষয়ে কথা বলায় ভর্তুকির বিষয়টি আলোচনায় আসে। ভর্তুকি আমরা অনেক ক্ষেত্রে দিচ্ছি। সেটা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করতে হবে। বেরিয়ে আসা মানে হঠাৎ করে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে যাবো এমন নয়। পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে, অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য উপায়ে, যাতে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না এ পদ্ধতিতে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ছিল কথা। ’
তিনি বলেন, ভর্তুকি গুরুতর বিষয়। আমাদের এ ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ভর্তুকি সাধারণ কোনো বিষয় নয়। কিছু লোক ভর্তুকি পাবে এবং অন্য মানুষ পরিশোধ করতে, এটা অন্যায্য।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ভর্তুকির ইকোনোমিক্স আছে। আপনি জানেন খুব ভালো করে। ভর্তুকি তখনই দেওয়া হয়, যখন আলটিমেটলি দুই উদ্দেশে দেওয়া হয়- সাময়িক সুরাহা দেয় আর দীর্ঘমেয়াদি টেকসই কিনা এ দুই বিচারে যখন গ্রহণযোগ্য হয়। খাদ্য নিরাপত্তার একটা ব্যাপার আছে, যেকোনো রাষ্ট্রে দুর্যোগ এলে খাদ্যের সংস্থান রাখতে চায়, খাদ্যে ভর্তুকি দেওয়া এক বিষয় আর অন্য বিষয়গুলোতে ভর্তুকি দেওয়া ভিন্ন বিষয়। ’
একনেক সভায় ভর্তুকি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘কৃষি ভর্তুকি নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এখানে মনে রাখতে হবে কৃষি ভর্তুকি কিন্তু অব্যাহত থাকবে। এখানে বলা হয়নি ভর্তুকি উঠিয়ে নেওয়া হবে; এটাকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখি আমরা, উৎপাদন ব্যবস্থা সহায়ক। আমেরিকা যে পরিমাণ ট্যাক্স আদায় করে কৃষকদের কাছ থেকে আমাদের দেশে কিন্তু কৃষিতে ট্যাক্স নেই, এটাও মনে রাখতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘আজকে যে ভর্তুকির বিষয়ে কথা হলো, সেটা হলো বিদ্যুৎ ও গ্যাসের এ ভর্তুকিগুলো, কারণ গ্যাস ও বিদ্যুৎ কিন্তু দরিদ্ররাই শুধু ব্যবহার করে না, ইন্ডাস্ট্রির কথা উনি বলেছেন, বিদ্যুৎ ব্যবহার করে অনেকে এসি চালান। এগুলো যেহেতু ব্যয়বহুল, তো ক্রমান্বয়ে এসব কমিয়ে আনা, এটা উনি বলেছেন। বিদ্যুতের অপচয় হয়, আমরা বহু জায়গায় সতর্ক না। ভর্তুকি এমন জায়গায় দেবো, যেমন বস্তি এলাকায়, কৃষক, দরিদ্র মানুষদের। বিদ্যুৎ যারা গুলশান-বনানী বা বিভিন্ন ধনী শ্রেণি ব্যবহার করে তারা আর এ মানুষগুলো এক নয়।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক-এর চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রায় আট হাজার ৮০৪ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন আট হাজার ৫১৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ১৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
অনুমোদিত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে আটটি নতুন প্রকল্প এবং বাকি দুইটি সংশোধিত প্রকল্প।
একনেক সভার কার্যক্রমে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন>>
>>> একনেকে ৮৮০৪ কোটির ১০ প্রকল্প অনুমোদন
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
এমইউএম/আরআইএস