ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সাংস্কৃতিক মিলনমেলা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও বিকশিত করবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
‘সাংস্কৃতিক মিলনমেলা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও বিকশিত করবে’

রাজশাহী: রাজশাহীতে আয়োজিত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত করবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।  

তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকার নিঃস্বার্থভাবে পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছে, আত্মত্যাগ করেছে। তাদের এ আত্মত্যাগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

রাজশাহীতে পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা উপলক্ষে ভারতীয় অতিথিদের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় এর আয়োজন করা হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারত অনেক বড় দেশ, অর্থনৈতিকভাবে ও সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশ। আর বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তাই তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক গভীর। ভবিষ্যতেও তা অটল থাকবে, আন্তরিক ও আরও বিশ্বস্ততার হবে।

এ সময় কৃষিমন্ত্রী উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যদি আরও সুদৃঢ় হয় তাহলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দুর্বল হবে, তাদের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত আমাদের পাশে আছে। আমরাও তাদের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করছি, ভবিষ্যতে আরও করবো। এর মধ্য দিয়েই দুদেশের বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক ইস্পাত কঠিন হবে।

সভাপতির বক্তব্যে রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলার আয়োজন করতে পেরে রাজশাহীবাসী আনন্দিত ও গৌরবান্বিত। এ সুযোগে সমবেত সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। সেই সম্পর্ক এখনও অটুট রয়েছে। এ সাংস্কৃতিক মিলনমেলার মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্ক অটুট ও আরও সুদৃঢ় হবে। দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা রাখবে।

মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন উল্লেখ করে বলেন, ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌরুট চালু করা সম্ভব। এটি হলে রাজশাহীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরবর্তীতে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজে লাগাতে চাই। আগামীতে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে দুদেশের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক আরও যেন গভীর হয়, সেক্ষেত্রে এ ধরনের মিলনমেলা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বলেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ সেই আওয়াজ এখনও আমাদের কানে বাজে। সেই আওয়াজে আমরা ভারতবাসী সাড়া দিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরাসহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের মানুষকে আশ্রয় দেয় ভারত। দুদেশের সম্পর্ক এখনও অটুট আছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক অবনতি ঘটাতে নানা সময় ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি। বাংলাদেশ-ভারত একে অপরের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করে চলেছে।

এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, এ সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন দুদেশের সম্পর্কে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে সংস্কৃতির বিনিময় অব্যাহত থাকবেই।

স্বাগত বক্তব্য দেন ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের (কো-অর্ডিনেটিং চ্যাপ্টার) প্রধান সমন্বয়ক এস এম সামছুল আরেফীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে এ সাংস্কৃতিক মিলনমেলার উভয় দেশে আয়োজন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এ মেলার মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্ক আরও সমন্নুত হবে।

অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের সংসদ সদস্য, ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিচারক, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিক ও সাংস্কৃতিক, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও বিশিষ্ট শিক্ষক, বিভাগের বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ভারতের অতিথিদের নাগরিক সংবর্ধনা দেন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর ৫০ বছর পূর্তিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের উদ্যোগে রাজশাহীতে বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা-২০২২ আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে ভারতের মন্ত্রী, অভিনেতা, কবি, শিল্পী, সাংবাদিকসহ ৩৬ জন অতিথিকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

এর আগে শনিবার সকালে রাজশাহী মহানগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা জানান ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পালসহ ভারতীয় অতিথি এবং রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। পরে মহানগরের কাদিরগঞ্জে থাকা জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।

গত ২৫ থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় অংশ নিতে ৩৬ জনের একটি প্রতিনিধিদল গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীতে এসেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।