ঢাকা: পুলিশ বাহিনীতে মন্দ লোক যারা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ চলছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘আইজিপি স্যারের নির্দেশে বাহিনী থেকে মন্দ লোকের বিরুদ্ধে জিহাদ চলছে। বাহিনীতে ভালো মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং ভালো মানুষকে রিক্রুট করার জন্য পুলিশের আইজিপি দক্ষতার সঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৭তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীতে মেধা অনুযায়ী যাদের চাকরি পাওয়া দরকার তাদেরই চাকরি হচ্ছে। একটি পয়সা খরচ করা ছাড়াই তাদের চাকরি হচ্ছে। ’
সারা দেশের পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে যে সিস্টেম চালু করা হয়েছে তা যথোপযুক্ত উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সেন্ট্রালি পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সদস্য তার যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি পাবেন। তদবির, টাকা-পয়সা খরচ করার কোনো সুযোগ এখনে নেই। বাহিনীতে পদায়ন প্রক্রিয়া আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পদোন্নতিতে কোনো টাকা-পয়সা লেগেছে, এমন একটি বিষয় দেখতে পারবেন না। এটা আমার প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো ভেতর থেকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে সদস্য খারাপ আচরণ করছে, তার বিষয়ে ন্যূনতম কোন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু অনুরোধ থাকবে, ধারণার বশবর্তী হয়ে সব সময় আমাদের (পুলিশের) সমালোচনা করবেন না। আপনি থানায় আসেন, দেখেন পরিবর্তনটা কী। যদি মনে করেন কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন হয়নি, তবে আমাদের দরজা খোলা আছে, পরামর্শ দেন, কথা বলেন। একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন রাজধানীর পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের আন্তরিকতার কোন কমতি নেই। ’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আজকে আমার গায়ে যে পোশাক আছে, কালকে আমি আপনার লাইনে এসে বসব। কারণ আমার গায়ে ইউনিফর্ম থাকবে না, আমার সন্তানের গায়ে ইউনিফর্ম থাকবে না। সেসময় আমার সন্তানের নিরাপত্তাও কিন্তু এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ওপর নির্ভর করে। আমরা এমন একটি বাহিনী তৈরি করে রেখে যেতে চাই আপনার ও আমার বিপদে পাশে দাঁড়াবে। ’
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পুলিশের যত কিছু পরিবর্তন হয়েছে উন্নতি হয়েছে সব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই হয়েছে। পুলিশের প্রতিটা অর্জনের পেছনে প্রধানমন্ত্রীর হাত আছে যোগ করেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, ‘নগরীর কোথাও কোন অপরাধ ও অবিচার হতে দেখলে আমাদের অবহিত করুন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, পাশে আছি। আপনার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায় অবিচারের বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমাদের চেষ্টার কোন কমতি নেই। আমি এটুকু আশ্বস্ত করতে পারি নগরীর দুই কোটি মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। নগরবাসীর যখন রাতে ঘুমায় পুলিশ সদস্যরা তখন জান-মাল ও সম্পত্তির পাহারা দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা ঈদ ও পূজা উদযাপন করছেন। কিন্তু পুলিশের ছুটি নেই। আমরা আমাদের বাবা-মা পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার সুযোগ পাই না। জনমানুষ যাতে এই উৎসবগুলোর নিরাপদে পালন করতে পারেন, সেজন্য আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তখন কাজ করি। আপনি আপনার সন্তানের হাত ধরে তার স্কুল অথবা পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন আর আমি কন্ট্রোলরুমে বসে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছি। অথচ আমার সন্তানও পরীক্ষার্থী। আপনার সন্তানকে আমার সন্তান মনে করেই আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। ’
এর আগে, অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৭তম প্রতিষ্ঠার বার্ষিকীর উদ্বোধন করেন। এরপর প্রামান্যচিত্র প্রদর্শনী করা হয়।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ডিএমপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী অনুষ্ঠানে এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন ও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত আইজিপি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান মনিরুল ইসলাম, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
‘শান্তি শপথে বলীয়ান’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সৃষ্টিলগ্ন থেকেই রাজধানীর জননিরাপত্তা বিধান ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই ইউনিট যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও পেশাদার মনোভাব বজায় রেখে ২৪/৭ ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তা বিধানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
এসজেএ/এএটি