ঢাকা: নতুন প্রজন্মের অনেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশপ্রেমিক নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে তাদের সঠিক ইতিহাস জানানোর তাগিদ দেন তিনি।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতির পিতার জীবনভিত্তিক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্ক্রল পেইন্টিং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: মহাজীবনের মহাপট’ শীর্ষক পক্ষকালব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে আয়োজিত বর্ণাঢ্য এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে আমরা অনেক দিবস পালন করি, আবার দেখা যায় সেই দিবসের মহত্ব কী, ইতিহাস কী? সেটা আমাদের নতুন প্রজন্ম জানা না। এই কারণটা আমার অনুভূতি। সেটা হলো ১৯৭৫ সালের পর থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে বিকৃত এবং মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ৭৫ পর থেকে যারা মানে একুশ বছর সেই সময় যারা তরুণ ছিল, যুবক ছিল বা শিশু-কিশোর ছিল তারা তো ইতিহাস জানতে পারেনি। তারা যখন বড় হয়েছে, তাদের সংসার হয়েছে বা ছেলে-মেয়ে হয়েছে তাদের কাছে সেই অনুভূতিগুলো নেই বা তাদের বাবা-মায়েরা হয়তো সন্তানদের এ বিষয়ে কোনো জ্ঞান দেয়নি। আর স্কুল-কলেজের ওপর নির্ভর করে, বন্ধু-বান্ধবের ওপর নির্ভর করে যতটুকু তারা শিখেছেন অনেক সময় তারা সঠিকটা বলতেই পারেন না। এ বিষয়ের দিকে সবার একটু নজর দেওয়া দরকার। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস কেন আমরা উদযাপন করি, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বা ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে আমরা হারিয়েছি যে নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। একাত্তরে যেভাবে গণহত্যা হয়েছে এদেশে বা আমাদের সংগ্রাম সেই সময়ে সাহস নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালি, অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে সেই বিজয়ের সঠিক ইতিহাসসহ অনেক ঘটনা আমাদের জীবনে রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের শিশু-কিশোর এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের জানা উচিত। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রজন্মের পর প্রজন্ম যদি সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। তাহলে তারাও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। তাদের ভেতরে মেধা-জ্ঞান বা শৈল্পিক মন বা মনন এগুলো বিকশিত হবে। শুধু ধন সম্পদের দিকে ছুটে বেড়াবে না বা কোন কোন ব্র্যান্ড পরবে সেদিকে ছুটে বেড়াবে না। তাদের সেই শিল্পী মনের একটা বিকাশ হবে। এটা আমি বিশ্বাস করি। ’
জাতির পিতার বৈচিত্র্যময় ও বহুমাত্রিক জীবনকে তুলে ধরে এ স্ক্রল পেইন্টিং করেছেন খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী শাহ্জাহান আহমেদ বিকাশ।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: মহাজীবনের মহাপট’ শীর্ষক ১৫০ ফুট দীর্ঘ স্ক্রল পেইন্টিংটি বাংলাদেশে সম্পাদিত সবচেয়ে বড় পটভূমিতে জাতির পিতার জীবনভিত্তিক চিত্রকর্ম। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালারিতে চিত্রকর্মটি পক্ষকালব্যাপী প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চিত্রকর্মটির ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিল্পীর তুলির আছড়ে ফুটে উঠেছে আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে অর্জনের ইতিহাস। শুধু বর্ণমালা না, শিল্পীর তুলিতেও মানুষ এটা দেখতে পারবে। উপলব্ধি করতে ও জানতে ও শিখতে পারবে। ’
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এ সুবর্ণ সময়কে স্মরণীয় করে রাখতে এবং বাংলাদেশের মানুষকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত করতে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়া প্রদর্শনীর আয়োজন সহযোগী বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘মাত্রা’র পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন শিল্পী আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সভাপতি শিল্পী জামাল আহমেদ ও স্ক্রল পেইন্টিংটির শিল্পী শাহ্জাহান আহমেদ বিকাশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
এমইউএম/এএটি