বগুড়া: বগুড়ার সদর উপজেলায় দুই নৈশপ্রহরী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড এবং দুইটি মোবাইলফোনসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
আটকরা হলেন- বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার মৃত মিসবাহুল মিল্লাত নান্নার ছেলে হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা (৩৪), সদর উপজেলার নারুলী তালপট্টি এলাকার সায়েদ হামান ব্যাপারীর ছেলে সুমন ব্যাপারী (২৭) এবং একই এলাকার বদিউজ্জামানের ছেলে রাহাত (২১)।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বগুড়া সদর উপজেলার বিসিক শিল্পনগরীর ‘মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজ’র সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে শামছুল হক (৬০) ও আব্দুল হান্নান (৪৫) নামে নিহত দুই নৈশপ্রহরীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত শামছুল হকের বাড়ি বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান প্রতাপপুর এলাকায়।
মূলত মাছু মেটালের পিকআপভ্যানচালক ও হেলপারের মালপত্র চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে দুই নৈশপ্রহরীকে হত্যা করা হয়। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক সুমন ব্যাপারী জানায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে বগুডার সাতমাথার খোকন পার্কে সুমন, নিনজা ও রাহাত এক সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তখন সুমন তার আর্থিক দুর্দশার কথা তাদের জানায় এবং তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার চায়। টাকা না দিয়ে নিনজা বলে তাদের একটা কাজ করে দিলে ২ লাখ টাকা পাবে। কাজের বিষয়ে সুমন জানতে চাইলে তারা বলে যে, ভোরে ফজরের নামাজের পর বিসিকের মাছু মেটালে যেতে হবে। তখন সুমন জানায়, তিনি কিভাবে মাছু মেটালে ঢুকবেন। তিনি তো আর কাজ করেন না। তাকে তো সিকিউরিটি গার্ড আটকাবে। তখন নিনজা তাকে জানায়, সকালে তার মাল ডেলিভারি আছে। তাই মাছু মেটালের ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা সেই করে দেবেন।
পুলিশ সুপার জানান, পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সুমন মাছু মেটালের সামনে যায়। পরে তারা মোট পাঁচজন সেখানে মিলিত হয়। সেখানে নিনজার সহায়তায় তারা মাছু মেটালের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর প্রথমে নাইটগার্ড হান্নানকে কৌশলে পানির হাউজের দিকে নিয়ে লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে মৃত্য নিশ্চিত করে পানির হাউজের ভেতরে ফেলে দেয়। এরপর অপর নাইটগার্ড শামসুলকে ঘুম থেকে ডেকে কৌশলে একই জায়গায় নিয়ে তাকেও লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে পূর্ব-পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যা নিশ্চিত করে একই হাউজে ফেলে দেয়। তারপর নিনজা হান্নানের ব্যবহৃত মোবাইল ও সিমকার্ড সুমনকে প্রদান করে গাজীপুর চলে যেতে বলে। সেখানে যেয়ে হান্নানের মোবাইল দিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবি জানাতে বলে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, দীর্ঘদিন ধরে মাছু মেটালের ড্রাইভার নিনজা ওই মেটাল থেকে বিভিন্ন সময়ে মালপত্র চুরি করে বাইরে বিক্রি করে আসছিল। এই বিষয় নিয়ে নাইটগার্ডদের সঙ্গে বনিবনায় সমস্যা হওয়ায় বিষয়টি মালিকপক্ষকে জানানোর কথা বলে গার্ড হান্নান ও শামসুল। চুরি বিষয়টি ধরা পড়তে যাওয়ার আশঙ্কায় নিনজা তার সহযোগীদেরসহ সু-কৌশলে নাইটগার্ড হান্নান ও শামসুলকে হত্যা করে এ অপহরণের নাটক সাজায়।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম, ডিবির ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ, সদর থানার ওসি সেলিম রেজাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
এএটি