মেহেরপুর: গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গায় মিথ্যা অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রী ও স্থানীয় ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। তাদের ঘরে আটকিয়ে রেখে হাত বেঁধে রাতভর নির্যাতন করে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি।
শুধু নির্যাতন নয়, রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা পর্যন্ত কোনো খাবার দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতরা।
জানা যায়, শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সহড়াতলা গ্রামের ইন্তাজ মার্কেট এলাকার ইলেক্ট্রিশিয়ান মিজানুর রহমান দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় মার্কেটের পাশেই প্রবাসীর জনৈক স্ত্রী তাকে ঘরের বিদ্যুৎ লাইন মেরামতের জন্য ডাক দেন। মিজানুর রহমান বিদ্যুতের লাইনে কাজ শুরু করলে ওই নারীর ভাসুর নাসির উদ্দীন ও তার ছেলে আব্দুল আলিম, ওহিল উদ্দীনের ছেলে ছমির উদ্দীন, আজমত আলী ফকিরের ছেলে শরিফুল ইসলাম হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় তারা ওই বাড়ির প্রধান দরজায় তালা মেরে দিয়ে মিজানুর রহমান ও ওই নারীকের হাত বেঁধে গণপিটুনি দেন।
প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, আমার বাড়িতে কেউ নেই, বাড়ির বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা ছিল। আমি মিস্ত্রি মিজানুর ভাইকে ডাক দিই। তিনি আমার বাড়িতে এসে লাইন ঠিক করতেই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন আব্দুল আলিম, ছমির উদ্দীন, নাসির উদ্দীন ও শরিফুল ইসলাম। প্রথমে তারা ঘরের প্রধান গ্রিলের প্রবেশ মুখ তালা দিয়ে দিয়ে আমাকে এবং মিস্ত্রিকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে রাত থেকে দফায় দফায় মারধর করেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তারা শুধু মারধর করেই ক্ষ্যান্ত হননি, রাত থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘরে আটকিয়ে রাখে, টয়লেটে পর্যন্ত যেতে দেয়নি।
একই অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী মিজানর রহমান। তিনি বলেন, আমি ওই বাড়িতে ঢুকতেই ওই চারজন সেখানে এসে আমাকে ও গৃহকর্তীকে মারধর শুরু করেন।
স্থানীয় কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মু. আলম হুসাইন বলেন, ঘটনার পর অনেকেই আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে নেন। আমি ঘটনাটি দেখে চলে আসি। তাদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে শুনেছি ছেলে-মেয়েকে বাঁধা অবস্থা থেকে ছেড়ে দিয়েছেন তারা।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দুই জনকে স্থানীয়রা আটকে রেখেছেন এমন সংবাদ পাওয়ার পর স্থানীয় কাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানানো হয় এবং মিমাংসা করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে শুনেছি তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। তবে কেউ এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে আমাকে কিছু জানায়নি। কেউ বাদী হলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
এদিকে হাত বেঁধে প্রবাসীর স্ত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও ঘরে আটকিয়ে রাখা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ তাদের অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার প্রসঙ্গ তুললেও অনেকেই এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এনিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে নানা ধরনের জল্পনা। মিজানুর রহমান হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে এবং ওই নারী সৌদি প্রবাসী আব্দুস সালামের স্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
এনটি