ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকা আসবে হাতের মুঠোয়!

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
ঢাকা আসবে হাতের মুঠোয়!

মাদারীপুর: প্রমত্তা পদ্মার বুকে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। আগামী জুনেই যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করার কথা রয়েছে।

সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মাপাড়ের জেলা মাদারীপুরবাসীর হাতের মুঠোয় চলে আসবে রাজধানী ঢাকা। এমন প্রত্যাশা এবং অভিমত সাধারণ যাত্রীদের।

শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে রাজধানী ঢাকাগামী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে যাত্রীরা জানান, ঢাকা যেতে এই নৌপথই যতো ভোগান্তির কারণ। ফেরি চলে তো চলে না। ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে পদ্মা পার হতে হয় ফেরিতে। এছাড়া লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় ঠেলে পাড়ি দিতে হয় উত্তাল পদ্মা। এই দুর্ভোগ দূর হবে সেতু চালু হলেই। ঢাকা চলে আসবে হাতের মুঠোয়। জরুরি প্রয়োজনে গভীর রাতেও পৌঁছানো যাবে রাজধানী ঢাকায়।
 
ষাটোর্ধ্ব রোকেয়া বেগম বলেন, লঞ্চে উঠতে-নামতে কষ্ট হয়। পায়ে ব্যথা। কয়েকজনে ধরে উঠাতে হয়েছে। আবার নামিয়েছে। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে পদ্মা পাড়ি দিতেই যতো কষ্ট। পদ্মাসেতু চালু হলে এই কষ্টটা আর করতে হবে না। বাড়ি থেকে গাড়িতে উঠলে একটানে ঢাকায় গিয়ে নামা যাবে।

আরেক যাত্রী মো. রোকন বলেন, সকালে গিয়ে বিকেলেই আবার ফিরতে হয়েছে। ঢাকা থাকতে হলে হোটেলে থাকতে হবে তার। এ কারণে সন্ধ্যার আগেই স্পিডবোটে করে পদ্মা পার হয়ে আসেন তিনি।

তিনি বলেন, জুনের পর এই তাড়াহুড়া করা লাগবে না। ধীরে-সুস্থে ঢাকা যাওয়া আর আসা করা যাবে। যতো রাতই হোক পদ্মা পার হওয়ার চিন্তা করা লাগবে না। ঢাকা থেকে এক গাড়িতে বাড়ির কাছে এসে নামা যাবে তখন।

শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে কথা হয় এই যাত্রীদের সঙ্গে। পদ্মাসেতু নিয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা জানান তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মাসেতুর সঙ্গে সঙ্গেই ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে। পদ্মাসেতু চালু হলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে বিরামহীন ভাবেই একটানা পৌঁছানো সম্ভব হবে। পথের কোথাও থামার দরকার হবে না কোনো গাড়ির। এই পথে সময়ের দূরত্ব তখন দাঁড়াবে মাত্র ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। বর্তমানে পদ্মানদী পার হতেই লঞ্চে লেগে যাচ্ছে ৪৫ মিনিট। আর ফেরিতে লাগছে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে স্রোতের তীব্রতা, শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট, কুয়াশা ইত্যাদির কারণে বছরের বিভিন্ন সময়েই ফেরি চলাচল ব্যহত হয় নৌরুটে। এছাড়া ঈদ মৌসুমে নৌরুটে নামে যাত্রীদের ঢল। লঞ্চ, ফেরি বা স্পিডবোটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে পার হতে হয় পদ্মনদী। পদ্মা সেতু চালুর পর ঘাট এলাকায় সাধারণ যাত্রীদের গন্তব্যে ফেরার যে দুর্ভোগ তা দূর হবে।

জানা যায়, পদ্মাসেতুর সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ভাঙ্গা পর্যন্ত সহজ যোগাযোগের জন্য ২০১৬ সালে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় ১১ হাজার ৩ কোটি টাকা ব্যয় এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষে ২০২০ সালের মার্চে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় দীর্ঘতম ৬ লেনের এই সড়কটি। এই সড়কটি চালু হওয়ায় ভাঙ্গা থেকে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে দ্রুত সময়েই পৌঁছানো যায়। এবং শিমুলিয়া থেকে ঢাকায় পৌঁছানো যায় মাত্র ৪০ মিনিটেই। পদ্মাসেতু চালু হলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত যানবাহন থেকে নামতে হবে না যাত্রীদের। মাত্র এক ঘণ্টাই পৌঁছানো যাবে রাজধানীতে। ৬ লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে সবমিলিয়ে ২৫টি সেতু, ২৩টি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস, ৫৪টি কালর্ভাট এবং ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস।

এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের জন্য আলাদা করে রয়েছে ২টি টোলপ্লাজা। ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য রয়েছে পৃথক দুটি লেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শিবচরের পাঁচ্চর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে ২০ কিলোমিটার। এরপর জাজিরা পয়েন্টের পদ্মাসেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক। এবং মাওয়া থেকে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কাস অর্গানাইজেশন (পশ্চিম)।

শিবচর উপজেলার এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন সূর্যনগর বাজারের সার ব্যবসায়ী লিক্সন হাওলাদার বলেন, বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলছে। পদ্মাসেতু চালু হলে যখন-তখন ঢাকা যাওয়া যাবে। যেকোনো মালামাল আনতে বেগ পেতে হবে না। শিবচর অঞ্চলে আমাদের ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার হবে।

ব্যবসায়ী মো.উজ্জ্বল জানান, এখন ঢাকা গিয়ে মালামাল কিনে ট্রলারে দিতে হয়। দুইদিন পর পদ্মার পাড়ের মাদবরেরচর থেকে আনতে হয়। এই দুর্ভোগ থাকবে না। ঢাকা থেকে সরাসরি দোকানের কাছে এসে পৌঁছানো যাবে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান জানান, পদ্মাসেতুর সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের চিত্র পাল্টে দেবে। পথের দূরত্ব কমে যাবে। মানুষের দুর্ভোগ কমবে। অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হবে।

তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতু চালু হলে দ্রুত যেমন ঢাকা যাওয়া যাবে। তেমনি শিবচরের চরাঞ্চলসহ সর্বত্র উন্নয়ন হবে। ইতোমধ্যে শিবচরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ হয়েছে। মেগা প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। পদ্মাসেতুর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।