নাটোর: বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা, প্রাচ্যনাটের গীতিনাট্য, আবৃত্তি, নাচ আর দুই দেশের মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে নাটোরে অনুষ্ঠিত হলো পঞ্চম বাংলাদেশ-ভারত সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। এতে দুই দেশের কৃষ্টি-কালচার নিয়ে অন্যান্য পরিবেশনায় আলো ছড়ালো এই সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় উত্তরা গণভবন প্রাঙ্গণে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। এরআগে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এবং পঞ্চম বাংলাদেশ-ভারত সাংস্কৃতিক মিলনমেলার যুগ্ম আহ্বায়ক জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ভারতের সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি’র চ্যান্সেলর এবং ফ্রেন্ডস্ অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট সত্যম রায় চৌধুরী মঞ্চে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
অন্যদিকে, অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত করতে জেলা প্রশাসনের উদ্যাগে উত্তরা গণভবনের মুল ফটক, মুল ভবনসহ সবখানেই বর্নিল সাজে সাজানো হয়। বিভিন্ন স্টলে বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় পণ্য উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানকে ঘিরে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না হয়, সেজন্য জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের অতিথি, জনপ্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ধারনকৃত শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (কারাগার) রাম প্রসাদ পাল, বাংলাদেশের রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এবং পঞ্চম বাংলাদেশ-ভারত সাংস্কৃতিক মিলনমেলার যুগ্ম আহ্বায়ক জুনাইদ আহমেদ পলক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ভারতের সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি’র চ্যান্সেলর এবং ফ্রেন্ডস্ অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট সত্যম রায় চৌধুরীর ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ কোঅর্ডিনেটিং চ্যাপ্টারের প্রধান সমন্বয়ক এএসএম সামছুল আরেফিন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি, নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর-১ (লালপুর ও বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-নওগাঁ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রত্না আহমেদ, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ও পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি। এসময় তারা বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে লেজার লাইট শো’র মাধ্যমে ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয় পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার পথ পরিক্রমা উপস্থাপন করা হয়।
এরপর শুরু হয় ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে যৌথ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। অনুষ্ঠানে জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেন কবিতা আবৃত্তি করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন অনিমা রায়, সংগীত পরিবেশন করেন ভারতের শাহেদ চট্টোপাধ্যায়, নবনীতা রায় চৌধুরী, শুভজীত, মান্ডবী চক্রবর্ত্তী, শান্তনু চৌধুরী, উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা, প্রাচ্যনাটের গীতিনাট্যসহ অন্যান্য পরিবেশনা দর্শকরা প্রাণভরে উপভোগ করেন। শেষে বিভিন্ন আতশবাজি বাজিয়ে অনুষ্ঠানটিকে আরো প্রাণবন্ত করা হয়।
ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ কোঅর্ডিনেটিং চ্যাপ্টারের প্রধান সমন্বয়ক এএসএম সামছুল আরেফিন বাংলানিউজকে জানান, রোববার বেলা দেড়টায় ভারতের সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি’র চ্যান্সেলর এবং ফ্রেন্ডস্ অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট সত্যম রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে ৪২ সদস্যের প্রতিনিধিদল নাটোরে আসেন।
ভারতের ত্রিপুরা ও পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য থেকে আগত প্রতিনিধিদলের মধ্যে ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (কারাগার) রাম প্রসাদ পাল। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে, বিকেলে বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এবং রাজশাহীতে নিযুক্ত সহকারী হাই কমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটি উত্তরা গণভবন পরিদর্শন করেন।
অতিথিরা উত্তরা গণভবনে বঙ্গবন্ধুর উপরে পাভেল রহমানের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী উপভোগ করেন। প্রদর্শনীতে নাটোরের উত্তরা গণভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য সহযোগে আটটিসহ মোট ২০টি দূর্লভ আলোকচিত্র স্থান পায়। অতিথিরা গণভবনে মৈত্রী বৃক্ষরোপণ করেন। এরআগে, প্রতিনিধিদল নাটোরের রাণীভবানী রাজবাড়ি পরিদর্শন করেন এবং শ্যাম সুন্দর মন্দিরে পূজা অর্চনায় অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
এনটি