সিরাজগঞ্জ: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মদিনে আবারও উৎসবমুখর হয়ে উঠছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি। ইতোমধ্যে বর্ণিল সাজে সেজেছে কাছারিবাড়ি প্রাঙ্গণ।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে দুই বছর কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই নিভৃতে কেটে গেছে কবিগুরুর জন্মদিন। দুই বছর পর এবার জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে কবির জন্মদিন উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
রোববার (৮ মে) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্র অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য রবীন্দ্রমেলা। শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ায় এবার নতুন আঙ্গিকে কবিগুরুর জন্মবাষির্কী পালন করবে শাহজাদপুরবাসী।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, দুই বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে শাহজাদপুরে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন হচ্ছে। রবীন্দ্র ভক্তদের পদচারণায় ইতোমধ্যে মুখরিত হয়ে উঠছে শাহজাদপুর। সব মিলিয়ে উৎসবের আবহ সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় জাতীয় ও স্থানীয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। শাহজাদপুর কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বর্ণাঢ্য রবীন্দ্রমেলা। রোববার সকাল ১০টার দিকে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। মঙ্গলবার (১০ মে) সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উপাচার্য ড. মো. শাহ আজম বাংলানিউজকে বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে কবির জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সহায়ক আয়োজক হিসেবে অনুষ্ঠানমালায় অংশগ্রহণ করছে। শেষ দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা বাংলানিউজকে বলেন, শাহজাদপুরবাসীর জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রচণ্ড প্রভাব রয়েছে। যার ফলে এখানে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী পালনে মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। শাহজাদপুরবাসী তাদের প্রিয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
প্রসঙ্গত, শাহজাদপুর ছিল নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারির অংশ। ১৮৪০ সালে জমিদারি নিলামে উঠলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তের টাকা দশ আনায় এ জমিদারি কিনে নেন। ১৮৯০ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখাশোনা করতে শাহজাদপুরে আসেন। ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত ৮ বছর এখানে বসবাস করেন। এখানে অবস্থানকালে কবিগুরু রচনা করেন কাব্য: সোনারতরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুটি পাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, যমুনা, হৃদয়, ভরা ভাদরে, প্রত্যাখ্যান ও লজ্জা; ছোটগল্প: পোস্টমাস্টার, রাম কানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা, ব্যবধান, তারাপ্রসন্নের কীর্তি, ছুটি, সমাপ্তি, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথি; ৩৮টি ছিন্ন পত্রাবলী, প্রবন্ধ ও গীতাঞ্জলির অংশ বিশেষ এবং বিসর্জন নাটকের মতো সাহিত্যকর্ম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২২
আরবি