ফরিদপুর: খুলনা নগরের মহেশ্বরপাশা এলাকার নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার ২৯ দিন পর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্যার (৫৫) বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রহিমা যে বাড়িতে ২৯ দিন আত্মগোপনে ছিলেন সেই বাড়ির তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুলনা থানা পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তারা হলেন- বাড়ির মালিক কুদ্দুস মোল্যার স্ত্রী হিরা বেগম (৫০), ছেলে আলামিন বিশ্বাস (২৫) ও কুদ্দুস মোল্যার ছোট ভাই আবুল কালামের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৪৫)। তারা এখন খুলনা পুলিশের জিম্মায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। কুদ্দুস মোল্যা বর্তমান বোয়ালমারী উপজেলা ডোবরা জনতা জুটমিলের একজন কর্মচারী।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার নিখোঁজ হওয়া রহিমাকে বোয়ালমারীর সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। খুলনা থেকে পুলিশের একটি দল এবং বোয়ালমারী থানা পুলিশ গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে উদ্ধার করে। তাকে রাতেই খুলনা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি পরিবারের কারও সহায়তায় বোয়ালমারীতে আত্মগোপনে ছিলেন বলে ধারণা করছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
জানা গেছে, চলতি বছরের গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে রহিমার খোঁজ না পেয়ে পরেরদিন তার মেয়ে আদুরী খাতুন দৌলতপুর থানায় মামলা করেন।
সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত করছিল। এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার দিকে রহিমা বেগমের আরেক মেয়ে মরিয়ম মান্নান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি মাত্র’। পরে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোরগোল পড়ে যায়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মরদেহের পোশাক দেখে তাকে নিজের মা দাবি করেছিলেন মরিয়ম।
তবে পরেরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে মরিয়াম জানান, তার মায়ের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে খুলনার পুলিশ সুপার (এসপি) তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন।
এদিকে, রোববার সকালে বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্যার ভাগিনা জয়নাল জানান, তার মামা কুদ্দুস বিশ্বাস খুলনা শহরের মীরেরডাঙ্গা সোনালী জুটমিলে চাকরি করতেন। এক সময়ে তিনি খুলনা নগরের মহেশ্বরপাশা এলাকার নিখোঁজ হওয়া রহিমার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নানের স্ট্যাটাস থেকে বিষয়টি জানতে পারেন জয়নাল।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিষয়টি জানার পর তাতে ব্যবহৃত একটি ছবি রহিমা বেগমকে দেখিয়ে বলি যে এটা আপনার ছবি কিনা; ওই সময় রহিমা হতভম্ব হয়ে বলেন, আমার ছবির মতোই তো লাগতেছে। তার মেয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেওয়া দুইটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে রহিমার ছেলে মিরাজের স্ত্রী ফোনটি রিসিভ করেন। রহিমার বিষয়টি তাদের বললে তারা ওই নম্বরে আর ফোন দিতে নিষেধ করে। তারপর থেকে আমাদের সন্দেহ হয়। রহিমাকে না জানিয়ে বিষয়টি ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে জানাই। তিনি খুলনা মহানগরের ২ নম্বরের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন নিখোঁজ হওয়া রহিমাই ওই নারী। তিনি যাতে পালিয়ে না যান সে বিষয়ে আমাদের নজর রাখতে বলেন কাউন্সিলর। তারপর ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে খুলনা ও বোয়ালমারী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রহিমাকে খুলনা নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
ইআর