ঢাকা: চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে ছিটিয়ে দুই জঙ্গির পালিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ফুটে এসেছে বাংলানিউজের হাতে। এতে দেখা যায়, একটি মোটরসাইকেলে চড়ে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল পালাচ্ছেন।
রোববার (২০ নভেম্বর) বিকেলে ভিডিও ফুটেজটি আসে বাংলানিউজের হাতে। অবশ্য এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা বা কেউ কোনো মন্তব্য করেননি।
৪৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে একজন করে চালকের দুটি মোটর সাইকেল আদালত সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তৃতীয় আরেকটি মোটরসাইকেলে তিনজন ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। তাদের একজনের মাথায় হেলমেট ছিল। অপর দুজনের ছিল না। লাল রঙের অ্যাপাচি আরটিআর মডেলের মোটরসাইকেলের পেছনে এক ব্যক্তিকে দৌড়াতে দেখা যায়।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, তৃতীয় মোটরসাইকেলে চড়া দুজন প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল।
রোববার সংশ্লিষ্ট মামলায় হাজিরা দিতে জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে হাজিরা দিতে আনে পুলিশ। হাজিরা শেষে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুই জঙ্গি পুলিশ সদস্যদের চোখে-মুখে স্প্রে করে। এতে তারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লে শামীম ও সোহেল পালিয়ে যায়।
পলাতক দুজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হাজত খানায় নেওয়ার সময় চার আসামির মধ্যে তাদের ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। সহযোগীরা দুটি মোটরসাইকেল করে আদালতে এসেছিলেন।
শামীম ও সোহেল সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুর এবং লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার ভেটশ্বর গ্রামের বাসিন্দা।
এদিকে, দুই জঙ্গি পালানোর ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বিকেলে এক আদেশে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ পুলিশ।
আদেশে সই করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপস)সভাপতি ও ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশন্স), যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি), উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-লালবাগ), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (সিআরও) সদস্য করে এ কমিটিতে আগামী তিন তিন কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তার আগে পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সরকার। সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পুলিশ সদর দপ্তরও এ দুই জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিলে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।
ঘটনার পরপরই রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। মোড়ে মোড়ে বসানো হয় চেকপোস্ট। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন। তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে আশপাশের সব স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হচ্ছে। পালিয়ে যাওয়াদের ধরতে পুলিশের একাধিক ইউনিট মাঠে কাজ করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ ঘটনায় যদি কারও অবহেলা-গাফিলতি থাকে, যদি কেউ ইচ্ছে করে এ কাজটি ঘটিয়ে থাকেন তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা রেড এলার্ট জারি করেছি। যাতে তারা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে। পুলিশ তাদের খুঁজছে। আশা করি খুব শিগগিরই তাদের ধরতে পারবো। আমরা বর্ডার এলাকাগুলোতেও বলে দিয়েছি, তারা যেন পালিয়ে যেতে না পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
পিএম/এমজে