ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শিশুটি দলিত সম্প্রদায়ের তাই...

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
শিশুটি দলিত সম্প্রদায়ের তাই...

মৌলভীবাজার: কুলাউড়া উপজেলায় দলিত সম্প্রদায়ের শিশুদের হোটেলের চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।

জানা গেছে, দলিত সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর স্কুলে পড়তে পারলেও টিফিনের সময় তারা কোনো হোটেলে গিয়ে চেয়ার টেবিলে বসে খেতে পারে না। তাদের হোটেলের মেঝেতে খেতে দেওয়া হয়। শিশুমন এতকিছু বোঝে না, তাই তারাও বাধ্য হয়ে মাটিতে বসে খাওয়া দাওয়া করে।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) স্কুল ছুটির পর এক মেয়ে শিশু তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশের একটি হোটেলে খেতে যায়। কিন্তু সেই হোটেল মালিক তাকে চেয়ার টেবিলে বসতে না দিয়ে মাটিতে খেতে দেয়। একটি কাগজে শিশুটিকে খেতে দেওয়া হয়।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে এলে নিন্দার ঝড় ওঠে। কিন্তু এতে বিকার নেই ওই হোটেল মালিকের।

স্থানীয়রা বলছেন, সমাজের কথিত উঁচু সমাজের লোকজন দলিতদের সহজভাবে নিতে পারে না। তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। কথা বলতে গেলেও নানাভাবে হেয় করা হয়।

বেশ কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী অভিযোগ করে, তারা স্কুলের টিফিনের সময় বা ছুটির সময় হোটেলে বসে খেতে পারে না। তাদের অন্যান্য সহপাঠীরা সহজে হোটেলে বা দোকান থেকে খাবার নিয়ে খেতে পারলেও তারা পারে না। করা হয় বৈষম্যমূলক আচরণ। হোটেলের বাইরে মাটিতে বসিয়ে তাদেরই নিজস্ব পাত্রে খাবার খেতে দেওয়া হয়।

এসব শিক্ষার্থীরা বলতে পারে না বা জানে না, কেন তাদের সঙ্গে এমন করা হয়। এ প্রতিবেদকের কাছ থেকেই বরং তারা জানতে চায়, কেন তাদের সহজভাবে নিতে পারেন না কেউ?

বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের কুলাউড়া শাখার সভাপতি মৎলা বাসপর বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দলিতরা সামাজিক বা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজ করে। তাদের ছেলে মেয়ে শহরের বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেখা করে। কিন্তু স্কুল টিফিনের সময় অন্যান্য ধর্ম-সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোররা হোটেলে গিয়ে খেতে পারে। কিন্তু দলিত শিশু-কিশোররা স্কুল ড্রেস পরে গেলেও তাদেরকে কাগজে খেতে দেওয়া হয়। ময়লা পাত্রে পানি পানের জন্য দেওয়া হয়।

এসব ব্যাপারে তারা প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু বৈষম্য কমার চেয়ে বেড়েছে। কুলাউড়া উপজেলার ইস্টার্ন, নাজমা, পাকসী ও গোল্ডেনভিউ নামে হোটেলগুলোয় দলিত শিশু-কিশোরদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয় বলেও মৎলা বাসপর অভিযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে কুলাউড়া হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লোকমান মিয়া বলেন, দলিতদের ব্যাপারে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আপত্তি করেন অন্যান্য গ্রাহকরা। বাচ্চাদের মাটিতে বসিয়ে কাগজের পাত্রে খাওয়ানোর বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এসব ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।

কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান এ ব্যাপারে বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমি একটি হোটেল পরিদর্শন করেছি। দলিতদের সঙ্গে বৈষম্য করা হবে- আইনের কোনো অংশে এমন কোনো নিয়ম আছে কিনা বা কোনো ধর্মগ্রন্থে এ বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়েছে কিনা, তাদের কাছে জানতে চেয়েছি। তারা উত্তর দিতে পারেননি। কড়াভাবে তাদের বলা হয়েছে কেউ কারও সঙ্গে কোনোরকম বৈষম্য করতে পারবেন না। বিপরীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগী শিশু ছাত্রীরা সঙ্গে যেটি হয়েছে, সেটি সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ২৪ নভেম্বর, ২০২২
বিবিবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।