ঢাকা: রাজধানীর কোনো ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে জরিমানা গুনতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, বাসায় ডেঙ্গুর লার্ভা থাকলে বা রাস্তায় রড রাখলে যদি জরিমানা করতে পারি তাহলে ভবনে ফায়ার সেফটি (অগ্নি নিরাপত্তা) না থাকলে কেন করতে পারবো না? আমি ২০টি অফিস, স্কুল, কলেজ, শপিং মল, হাসপাতাল ভবন পরিদর্শন করবো।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত ‘৮ম আন্তর্জাতিক ফায়ার, সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো ২০২২’-এর গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, বার বার বলার পরেও যদি ভবনগুলোতে ফায়ার সেফটি না থাকে তবে তাদের জরিমানা করবো।
নগরীর সরু সড়ক বড় করা হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ছোটখাটো সড়ক বড় হচ্ছে। ২০ ফুট সড়ক হতে হবে না হলে কোনো ধরনের তহবিল দেব না। ইব্রাহিমপুর ও কচুক্ষেত এলাকায় দেখবেন সবাই ভবন ভাঙছে এবং সড়ক বড় করছে। বড় সড়ক না হলে আমরা তা ঠিক করে দেবো না।
মেয়র আতিক বলেন, আমি বিজিএমইএ-এর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরে রানা প্লাজায় বড় ডিজাস্টার (ভেঙে পড়ে)। আমরা পোশাক কারখানাগুলোকে একটি সিস্টেমের মধ্যে এনেছি। আমরা যখন গার্মেন্টস শুরু করেছি তখন এটা ছিল না। আমরা পোশাক কারখানায় ফায়ার সেফটি ও বিল্ডিং সেফটি নিশ্চিত করছি। বিশ্বের ১০টা গ্রিন কারখানার মধ্যে ৮টিই বাংলাদেশে। গার্মেন্টসে যদি ট্রান্সপারেন্সি করতে পারি ঢাকা শহরকে কেন পারবো না। নগরীর নাগরিকদের সচেতন করতে ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং প্রোভাইড করবে সিটি কর্পোরেশন।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মইন উদ্দিন বলেন, যেভাবে উন্নয়নশীল দেশ হচ্ছি তাতে করে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ফায়ার সেফটির জন্য। আমি মনে করি সার্ভিসের সদস্যদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আমাদেরও কিছু দুর্বলতা আছে।
তিনি বলেন, ভবন নির্মাণ করতে সবাই চাই কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কেউ টাকা খরচ করতে চায় না। নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কেমিক্যালের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। নেই কোনো আইন। এটা জরুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। ফায়ার সেফটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। শিশু বয়স থেকে ফায়ার সেফটির বিষয়ে সচেতনতা তৈরির বিনিয়োগ করতে হবে। কারিকুলামে এ বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে। ফায়ার সেফটির বিষয়ে প্রশিক্ষণাগার তৈরি করতে হবে।
নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ফায়ার সেফটির বিষয়ে শতর্কতা জরুরি। সচেতনতার জন্য রেগুলার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সচেতন করার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি এই বিষয়ে সরকারকে বাধ্য করতে। বর্তমানে ফায়ার সেফটির কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে শিল্প কারখানা রেগুলার মনিটরিং করতে হবে। সরকার বিষয়টি অনুধাবন করছে, বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) উদ্যোগ নিচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে কাজ করবে। সচেতনার জন্য ইনফোর্স করতে হবে। আমাদের সোচ্চার হতে হবে ফায়ার সেফটির বিষয়ে। আমরা সবাই জানি আগুন ধরার অন্যতম কারণ গ্যাস লাইন ও বৈদ্যতিক সরঞ্জাম। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রতিবছর ইলেকট্রিক ও লিফট মেইনটেন করতে হয়।
ডেপুটি পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, সেফটি মেজারের ক্ষেত্রে ল এনফোর্সমেন্ট জরুরি। প্রতিদিন ৫১৮টি নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। তারপরও যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি। ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি মুভ করলে আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি। আমাদের কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির কোনো আইন নেই। আমাদের একটি আইন করা জরুরি।
সিনিয়র সাংবাদিক প্রণব সাহা বলেন, ফায়ার সেফটি নিয়ে আমাদের সচেতনতা কম। আর সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে দিতে হবে। আমাদের কলকারখানা অধিদফতরের কাজ আরও স্বচ্ছ হতে হবে। ব্যাংককেও আমরা সচেতন করতে পারি। ঋণ দেওয়ার সময়ও খুঁজে দেখা উচিত সেই ভবনে ফায়ার সেফটি আছে কিনা। ফায়ার সেফটি না থাকলে ঋণ দেওয়া উচিত হবে না।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন ইসাব-এর সভাপতি জহির উদ্দিন বাবর, মহাসচিব মাহমুদুর রশীদ, প্রচার সম্পাদক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২২
এমএমআই/এসএ